অবতক খবর ,অভিষেক দাস, মালদা:- গত দুই দশক ধরে নিজের হাতেই প্রতিমা গড়েন পুরাতন মালদার গৃহবধূ যমুনা সরকার। কিন্তু প্রতিমা গড়াটা তার নেশা হলেও, এলাকার দুঃস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে এই মৃৎশিল্পীর পেশার প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহী যমুনাদেবী। তাই নিজের প্রতিভা অন্য দুঃস্থ মহিলাদের কাছে প্রশিক্ষণ হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন মৃৎশিল্পী গৃহবধূ যমুনা সরকার।
পুরাতন মালদা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা এলাকার বাসিন্দা যমুনা সরকার । তার স্বামী অনিক সরকার । তিনিও মাটির প্রতিমা তৈরীর কাজে যুক্ত রয়েছেন। পরিবারে তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে যমুনাদেবীর। আর সংসারের হাল সামলিয়ে প্রতিবছরের মতো এবছরও বেশ কয়েকটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি । পাশাপাশি এলাকার বেকার দুঃস্থ মহিলাদের এই মৃৎশিল্পের কারুকার্যে শেখানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
মৃৎশিল্পী যমুনাদেবীর কথায় বিয়ের পর থেকেই স্বামীর হাত ধরে প্রতিমা তৈরীর কাজ শিখেছিলাম। এখন আমি নিজে স্বাবলম্বী। আমার মতো যারা গৃহবধূ এবং বেকার দুঃস্থ মহিলা রয়েছেন, তারাও যেন ভবিষ্যতে এই মৃৎশিল্পী পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এবং নিজেদেরকে স্বনির্ভর করতে পারেন সেই উদ্যোগ আমি নিয়েছি। প্রয়োজনমতো এলাকার দুঃস্থ মহিলাদের প্রতিমা তৈরির কাজও শেখাচ্ছি।
উল্লেখ্য , পুরাতন মালদার ব্লকের মুচিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন যমুনাদেবী। দুই দশক আগে পুরাতন মালদা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা এলাকার বাসিন্দা অনিল সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পর থেকেই গৃহকর্মে পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহ বাড়ে যমুনাদেবীর। প্রথমে ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করতেন তিনি। ধীরে ধীরে মৃৎশিল্পের কাজে দক্ষতা অর্জন করার পর এখন দুর্গা, কালী, গণেশ , বিশ্বকর্মা সহ বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি নিজেই হাতে গড়েন মৃৎশিল্পী যমুনা সরকার। পুরাতন মালদায় যমুনাদেবী মৃৎশিল্পী হিসাবে নামডাক ভালোই ছড়িয়েছে। বাড়ি থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে রাস্তার ধারে রসুলপুর এলাকায় ছোট্ট একটি কারখানা রয়েছে অনিল সরকারের। সেখানেই মৃৎশিল্পী যমুনাদেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন। এবছর পাঁচটি দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়েছেন তিনি। প্রতিমার কাজ প্রায় শেষের দিকে।
প্রতিমা তৈরির ফাঁকে মৃৎশিল্পী যমুনাদেবী বলেন, বিয়ের পর স্বামীর আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না৷ এরই মধ্যে আমাদের তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব বেজে যায় তারপর এই স্বামীর এই শিল্পীর পেশায় কাজে আমিও নিজেকে নিযুক্ত করি। স্বামীর হাত ধরে শুরু করি মূর্তি গড়ার কাজ৷ এখন আমি নিজেই প্রতিমার কাঠামো তৈরি করি, মাটি লাগাই, এমনকি চোখও আঁকি৷ এভাবেই স্বাবলম্বী হয়ে এখন ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছি৷ চাইছি, এই কাজটা কিছু গরিব মেয়েকে শেখাই৷ যাতে বিয়ের পর তাদের কেউ আমার মতো হঠাৎ সংকটের মধ্যে না পড়েন। সংসারের অভাব মেটাতে মৃৎশিল্পীদের কাজ শিখে যেন উপার্জন করতে পারেন । এরকম কিছু দুঃস্থ মহিলাদের এখন বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে।