অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ
লকডাউন ও বীজপুর পটুয়াপাড়া
পর্ব-১
জীবনটা মাটি মাটি করে মাটি হয়ে গেল। মা তো এলো না!:মদন পাল
শারদ বেলা সূর্য অস্তাচলে ডুব দিতে চলে ভাগীরথী জলে। জল প্রিয় বলে আমি বেরিয়ে পড়ি। মহাকরোনা বেলা। জীবন নিয়ে খেলা করে সময়। লকডাউন, মানুষের যাপিত জীবনে ছেদ টেনে আনতে চায়। মানুষ তো লড়াকু। সে তো হারতে চায় না। শিল্পীর মনন কারিগরি নিয়ে ভাবে।
মা গর্ভবতী হয়, প্রজন্মের জন্ম দেয়। এবার প্রজন্ম ভাবে মাকে জন্ম দেবে। কিন্তু কিভাবে? কিভাবে হবে তার সুচারু নির্মাণ? শিল্পীর কাছে আমি যাই । তার কাছে আমি নেই শ্রমিষ্ঠ জীবনের পাঠ।
রাধারাণী শিল্পালয়। খাসবাটি, হালিশহর, জিপি রোড। পশ্চিমে বহমান ভাগীরথী।তার পাশে রাস্তার ধারে মাটির ডাঁই। মাটি দিয়ে মা বানাবে পটুয়া মদন পাল। সঙ্গে তার দুই প্রজন্ম। পুত্র শ্যামল ও তপন। তারাও লাগাচ্ছে হাত। তারাও রীতিমতো শিল্পী। তবে মন খারাপ তাদের।
বাইরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। লকডাউন জীবনকে পুরোপুরি ডাউন করে দিয়েছে, বললেন মদন পাল। কি যে হবে, সরস্বতী পুজোর পর থেকে শুরু হয়েছে প্রতিমার কাজ। ২৫টি বড় প্রতিমা তৈরি। কিন্তু ৫টির বায়না হয়েছে মাত্র। বাকিগুলি পড়ে আছে। বড় প্রতিমায় পুঁজি খেটে গেছে। বাইরের কারিগররা এসে বড় প্রতিমা তৈরি করে দিয়ে চলে গেছে। প্রায় সম্পূর্ণ কাজ। লকডাউন, তারা আর আসবেনা। আসারও আর দরকার নেই। কারণ বড় প্রতিমা কেউ আর দর দিয়ে কিনবে না। তপন বলে,আর ওগুলোর বায়নাও হবে না। আমাদের কারোর করোনা হয়নি। কিন্তু করোনা আমাদের গ্রাস করেছে। ২০টি ছোট প্রতিমা বানিয়েছি। তাও ১০টির বায়না হয়েছে মাত্র। এখন একজন হেল্পার নিয়ে কাজ করছি। মা তো আসবেই। আমাদের কি দিয়ে যাবে আর কি নিয়ে যাবে কে জানে? রুজি কি আর তেমন মিলবে?
মদন পাল বলেধ, জীবনটা মাটি মাটি করেই তো পার হয়ে গেল। মাটি ছেনে আজীবন মা বানালাম। মায়ের শরীর গড়লাম, চক্ষু দিলাম। ত্রিনয়নী মা কি আমাদের দিকে তাকালেন? মা তো সর্বজয়া! আশা তো জাগানিয়া! সেই আশায় বাঁচে পটুয়া!