অবতক খবর,১৮ জানুয়ারি: একটা কমিউনিটি হল বা টাউন হল অর্থাৎ একটা সংস্কৃতি ভবন নির্মাণের জন্য ৪৪ বছর ধরে নাটকের মহড়া চলছে কাঁচরাপাড়ায়। বামফ্রন্ট আমলে তাদের পরিচালিত পৌরসভায় অসংখ্যবার আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে জনগণের পক্ষ থেকে। স্থানীয় পত্রিকায় একটা সংস্কৃতি-ভবন, একটা কমিউনিটি হল নাগরিক জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীন, সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাতই করেননি।

প্রথম ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট আমলে অমূল্য উকিল চেয়ারম্যান থাকাকালীন পৌরমন্ত্রী প্রশান্ত শূর এই টাউন হলের শিলান্যাস করেছিলেন কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপ্যালিটি হাই স্কুল সংলগ্ন রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। পরবর্তীতে এই স্থানটি সাংস্কৃতিক ভবনের জন্য উপযুক্ত নয়,এমন চিন্তা ভাবনা করে বাতিল করা হয়। যেহেতু এটি রেললাইন সংলগ্ন অঞ্চল।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রের দীর্ঘ টালবাহানার পর চেয়ারম্যান শংকর বসাকের আমলে কাঁচরাপাড়া কলেজ সংলগ্ন অঞ্চলে কমিউনিটি হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই অঞ্চলটি আগে মৃত শিশুদের কবরভূমি ছিল। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য্য মহা সমারোহে ওই অঞ্চলে পৌর কমিউনিটি হল নির্মাণের শিলান্যাস করেন এবং নির্মাণকার্যও শুরু হয়েছিল। যতদূর জানা গেছে,এই কমিউনিটি হল নির্মাণের জন্য ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল অর্থাৎ এটা ছিল ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার প্রজেক্ট। সেই নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর অর্থাৎ বুনিয়াদ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। টাইবিম বেঁধে কাজের সময়কালীন সরকারের পরিবর্তন ঘটে এবং কাজটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। সূত্রের খবর,এর জন্য ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে বোর পাইলিং এবং ফাউন্ডেশনের জন্য– বুনিয়াদের জন্য এই ব্যয় হয়েছে। ঠিকাদারের এখনো প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা পৌরসভার কাছে পাওনা আছে বলে জানা গেছে।

তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা এসে এই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। জানা যায়,ওই স্থান টাউন হল নির্মাণের পক্ষে অনুপযুক্ত,এমনই কারণ দর্শায় তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা এবং ওই জমির বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, এও জানা যায়।

হবু চন্দ্র রাজার দেশ, গবুচন্দ্র তার মন্ত্রী। বর্তমানে ২০২১ সালের এই নির্বাচনের প্রাক্কালে ওই জায়গাটিতেই টাউন হল নির্মাণের পক্ষে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় এবং অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি’২১, বর্তমান পৌর মন্ত্রী জনাব ফিরহাদ হাকিম ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলে দ্বিতীয়বার শিল্যানাস করেন। জানা গেছে এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এর সত্যতা এখনও জানা যায়নি। আরো জানা গেছে এই ভবনটি এমন আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত হবে যে, তা কলকাতার যেকোনো কমিউনিটি হল বা সাংস্কৃতিক ভবনের মানকে নাকি ছাড়িয়ে যাবে।

নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,মাটির নিচে যে পুরানো ভিত্তিপ্রস্তর রয়ে গেছে তা অপসারণ করে নতুন পরিকল্পনায় নির্মাণ কার্য করা অসম্ভব। সেখানে যে পরিমাণ পাথর, লোহা,লক্কর দিয়ে বুনিয়াদ নির্মাণ হয়েছে সেখানে নতুন করে বুনিয়াদ নির্মাণ করার দুঃসাধ্য। নতুন নির্মাণ করতে হলে ওই বুনিয়াদ, ওই পরিকাঠামোর উপর ভিত্তি করেই নির্মাণ কাজ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন,যদি বর্তমান ব্যয় বরাদ্দ ১৫ কোটি টাকা ধরা হয়,তবে এই টাকা আসবে কোত্থেকে?
পূর্বের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণে যে ৮০ লক্ষ টাকা গচ্চা গেল সেটা কার? তা তো জনগণের। এই টাকা জলাঞ্জলির দায় নেবে কে?
তৃতীয় প্রশ্ন যে স্থানটিতে এত বড় নির্মাণ অযোগ্য বলে এই তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা মনে করেছিল আলাদিনের কোন‌ যাদুকাঠিতে তা বর্তমানে নির্মাণযোগ্য হয়ে উঠলো?

বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, এটা রাজনৈতিক স্টান্ট, নির্বাচনী চমক। এই নির্মাণকার্য কবে শুরু হবে, সময়সীমা কি, কত বরাদ্দ তা কি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে? বামফ্রন্টের আমলে নির্মিত বাস টার্মিনালই এখনো পর্যন্ত চালু করতে পারেনি এই পৌরসভা!