আজ ২৭ এপ্রিল দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের জন্ম ও মৃত্যুদিন। নির্বাচনকালে তিনি কিভাবে ভোট পরিচালনা করেছিলেন, দেখুন

ইনি হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি একজন নিরক্ষর ফুলুরিওয়ালাকে কমিশনারে রূপান্তরিত করেছিলেন। তাঁর জন্মদিন ২৭ এপ্রিল।

ভোট দাদাঠাকুর ও ফুলুরিওয়ালা

টুকুন বলে! বাবা! মনে পড়ে মানুষটা? কেমন করে নির্বাচনে এক ফুরুলিওয়ালাকে জিতিয়ে এনেছিল? আর ঘোল খাইয়েছিল চেয়ারম্যান সাহেবকে? এই মানুষটাই পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে নীরবে সোচ্চারে প্রতিবাদ করেছিল একদিন?

আরে! উনি তো সাংবাদিক, কাগজওয়ালা একজন! নিজেই ছাপতেন, নিজেই কলকাতা গিয়ে কাগজ বিক্রি করতেন।

হ্যা বাবা! মনে পড়েছে। শরৎ পন্ডিত। ওনাকে লোকে বলতো দাদাঠাকুর। মনে আছে? শরৎ চাটুয্যে ওনাকে কি বলছিলেন?
বিদূষক শরৎচন্দ্র। কারণ ওনার পত্রিকার নাম ‘বিদূষক’।আর উনি পাল্টা বলেছিলেন, আরে! আমি তো বিদূষক মাত্র আপনি তো চরিত্রহীন শরৎচন্দ্র। কারণ শরৎচন্দ্র ততদিনে লিখে ফেলেছেন ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাস।

আসলে উনি ছিলেন পানিং মাস্টার। সেবার যখন রাজ‍্যে অনাহার, মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের আমলে ধান হল না, তখন পানিং মাস্টার লিখলেন, যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বি-ধান, সে রাজ্যে ধান না হওয়াই তো বিধান।

আর আকাশবাণীর পাশ দিয়ে নজরুলের গান শুনতে শুনতে এমন বিমুগ্ধ হয়ে গেছিলেন যে বলে উঠলেন কাজি নোজ রুল। তিনি ভোট ছড়া লিখেছিলেন, সেই বিখ্যাত ভোট ছড়া।
‘আয় ভোটাররা ভোট দিয়ে যা…’
আর ইংরেজিতে লিখলেন সেই বিখ্যাত ছড়া
RISE TO VOTE SIR
যেদিক থেকেই পড়া যাক একই হবে।

কার্তিক চন্দ্র সাহা, এক অশিক্ষিত ফুলুরিওয়ালা। তার ছাপাখানায় বসে ফুলুরি ভাজতো। সেখানে পড়েছিল এক মরা কুকুর। পুরসভার মোড়লদের কাছে অনেক আবেদন, নিবেদন করেও সরাতে পারলো না সে। সে ক্রমে ক্রমে সুপারভাইজার,কমিশনার, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে হাজির। নাকাল কার্তিক!

দাদাঠাকুর বলল, আরে কার্তিক! তুই কি ক্যাবলাম্যান? তোকে আমি কমিশনার বানাবো। আজ রাতে অন্ধকারে মরি কুকুরের ঠ্যাঙটায় দড়ি বেঁধে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির দোরগোড়ায় ফেলে রেখে আসবি।

তোর চেয়ারম্যানের সেই অন্নপ্রাশনের পেটের ভাত উঠিয়ে ছাড়বো।
ব্যাস! আর যায় কোথায়!
তাই করলো কার্তিকচন্দ্র।

চেয়ারম্যান বুঝতে পারলো, জল উঁচু থেকে নিচুতে যায়। এবার তো জল নিচু থেকে ওপরের দিকে উঠেছে।
সুইপার কো বুলাও! কুত্তা সাফ করো!

এইভাবে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন সাংবাদিক শরৎচন্দ্র। তিনি সেবার নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কার্তিককে। কার্তিক লেখাপড়া জানেনা। তিনি সাক্ষর করে তুললেন।

কার্তিক নিজের নামের নিচে লিখতেন:
কার্তিক চন্দ্র সাহা
কং, জং, মিং
কমিশনার, জঙ্গিপুর মিউনিসিপালিটি

এইভাবেই সমাজের বিরুদ্ধে তিনি লড়েছিলেন।
দাদাঠাকুর জানতেন নির্বাচনে জিতে কমিশনার মানে কমিশনখোর নয়, এমএলএ মানে এ মেলে, ও মেলে, সে মেলে নয়। এম পি মানে মিলিটারি পাওয়ার গণতন্ত্রের দফা রফা করে মার্ডারার অফ পার্লামেন্ট নয়, মেসেঞ্জার অফ পিপল্।

টুকুন বলল, বাবা! এই মানুষটার জন্মদিন, মৃত্যুদিন একই দিনে, ২৭ এপ্রিল।

হ্যাঁ টুকুন। মহাপুরুষদের জন্ম মৃত্যু একই দিনে হয়।
দাদাঠাকুর মহাপুরুষই ছিলেন