বিনয় ভরদ্বাজ , অবতক খবর,৯ই আগস্ট :: স্বাধীনতার 75 বছর পর সিপিএমের বোধোদয় হলো। এই প্রথম সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে যে তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করবে এবং জাতীয় পতাকা তাদের পার্টি কার্যালয়ে উত্তোলন করবে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রবিবার জানান যে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনার পর পার্টি ঠিক করেছে যে স্বাধীনতার 75 বছরপূর্তি উপলক্ষে সিপিএমের সমস্ত কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে ও স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। এই কর্মসূচি তারা টানা এক বছর ধরে পালন করবেন।
উল্লেখ্য এর আগে সিপিএম জাতীয় পতাকা তার দপ্তরে উত্তোলন করত না। তারা স্বাধীনতা দিবসও পার্টি কার্যালয়ে পালন করত না। তারা এই স্বাধীনতাকে পূর্ণ স্বাধীনতা মনে করত না। তারা তাই স্লোগান দিয়েছিল “ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়” ।
শুধু তাই নয় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পরেও জ্যোতি বসু স্বাধীনতা দিবসে নিজের হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নি। তিনি ও তার দল এই স্বাধীনতাকে মানেন না সেই বার্তায় তিনি সায় দেন । যদিও অনেক বিতর্কের পর জ্যোতি বসু 1989 সালে রাইটার্সের লাল বিল্ডিং-এ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন কিন্তু দল এই দিবস পালন করত না।
অন্যদিকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সুজন চক্রবর্তী যখন ছাত্রনেতা ছিলেন তখন তিনি জাতীয় স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং এই দিনের প্রাসঙ্গিকতার কথা বলেন ও বিভিন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সুজন বাবু পরিষদীয় দলের নেতা হওয়ার পর তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিকে বোঝাতে সক্ষম হন যে স্বাধীনতা দিবস তাদের পালন করা উচিত ও তার প্রাসঙ্গিকতা আছে। তিনি এই মর্মে রাজ্য কমিটি থেকে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় কমিটিকে পাঠান এবং সেই প্রসঙ্গে দলকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আবেদন জানান।
সুজন চক্রবর্তীর উদ্যোগে রাজ্য কমিটির দেওয়া প্রস্তাবকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি গ্রহণ করে এবং আলোচনার পর এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে তারা। এই প্রথম তাদের সমস্ত পার্টি কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস পালন করবে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে বলে ঘোষণা করেছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সিপিএমের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করেন যে সুজন বাবুর জন্য সিপিএম এবার দেশাত্মবোধের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। এটা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। শুধু তাই নয় এতদিন সিপিএম-এর আদর্শ চীন-রাশিয়ার ছিল। তার থেকে তারা বেরিয়ে এখন দেশের সঙ্গে যে যুক্ত হতে চলেছেন, সেটাও একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সিপিআইএম অর্থাৎ মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া তারা নিজেকে বললেও ইন্ডিয়ার জাতীয় পতাকা ও ভারতীয় স্বাধীনতা দিবসকে তারা মান্যতা দিত না অর্থাৎ দল ভারতবর্ষের দাবি করলেও তারা যে দেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় পতাকাকে পরিত্যাগ করে নিজেকে বিদেশি দল হিসেবে এই ভারতভূমিতে এতোদিন প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছিল। এই প্রথম তারা দেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় পতাকাকে গ্রহণ করে নিজেকে দেশের সঙ্গে যুক্ত করতে চলেছে। এটা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকেই।
অ,আ না শিখে ক,খ শেখা য়ায়না। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম না থাকলে আন্তর্জাতিকতাবাদে উন্নীত হওয়া যায়না,তা যত জোরেই ইন্টারন্যাশানাল গাওয়া হোকনা কেন। ভারতবর্ষের জাতীয় মনীষীরা, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মানুষের মধ্যে যে দেশপ্রেম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। দেশের মানুষ ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, ভগৎ সিং, নেতাজি, গান্ধীজিকে যে মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করেন এবং রেনেসাঁ যুগের রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা তারা উদ্বুদ্ধ, তারা উদ্বুদ্ধ বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন, কল্পনা দত্ত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মত্যাগে। কিন্তু এসব বুঝতে তাদের ৭৫ বছর লেগে গেলো। বড্ডো দেরি হল!
কোনো বিপ্লবী সংগঠন সে কমিউনিস্ট পার্টি হোক বা অন্য যে দলই হোক না কেন তার মধ্যে যদি দেশজ সাংস্কৃতিক চেতনা, দেশপ্রেম না থাকে তাহলে আন্তর্জাতিকতাবাদ ক্লিশে হয়ে দাঁড়ায় এবং তা জনগণের কাছ থেকে পার্টিকে দূরে সরিয়ে নেয়।কারণ মানুষ দেশকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
সিপিএম কোন বিপ্লবী পার্টি নয়, এটি একটি সংসদীয় দল। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চান। দেশের মানুষ যারা দেশ-জাতিকে দেশের মনীষাকে ভালোবাসেন তারাই নির্বাচনে ভোট দেয়। এই নির্বাচকদের ভালোবাসা পেতে গেলে জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের সঙ্গে জড়িত থাকা অবশ্যম্ভাবী সেটি দেরিতে হলেও সিপিএম বুঝতে পেরেছে। এর জন্য ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে– ইট ইজ বেটার লেট দ্যান নেভার। সিপিএম দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের যথার্থতা উপলব্ধি করতে পেরেছে।