অবতক খবর,১০ আগস্ট: অতিমাত্রায় দূষণের জেরে নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ভরা বর্ষার মরশুমে মুখ ফিরিয়েছে ইলিশও। দক্ষিণবঙ্গের যে অংশে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে এবং তার থেকে বিভিন্ন শাখানদী পেরিয়ে সাগরে মিশেছে। সেই অংশের দূষণ এবং তার প্রভাবে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে। অতিমাত্রায় দূষণের জেরে ইলিশও ঢুকছে না মোহনায়। ধীবর জাতির মানুষেরা ধীরে ধীরে পেশা বদলে ফেলছে, ফলে মাছের জোগানও কমছে। এই বিষয়ে গবেষণা করেই ‘ডক্টরেট অফ সায়েন্স’ অর্জন করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশীষ কুমার পানিগ্রাহী। তিনি ওড়িশার বেহেরাম্পুর ইউনিভার্সিটি থেকে এই ডিগ্রি পেয়েছেন। 2015 সালে এটির জন্য তিনি আবেদন করেন। এবং তারপর কাজ শুরু করছেন। গত সপ্তাহেই তাঁর এই গবেষনাপত্র স্বীকৃতি লাভ করে।
তাঁর গবেষণা প্রাধান্য পেয়েছে, কিভাবে এই শাখানদী ও উপনদী গুলি দূষিত হচ্ছে। এবং সেই জল গঙ্গায় মিশে গিয়ে কি প্রভাব ফেলছে। একদিকে গঙ্গার দূষণ কমানোর জন্য কেন্দ্র সরকার ‘দা ক্লিন গঙ্গা মিশন’ প্রকল্প হাতে নিলেও গঙ্গা সব থেকে বেশি যে অংশ থেকে দূষিত হচ্ছে, সেই শাখানদীগুলির দূষণ কমানোর কোনও উদ্যোগ নেই। তিনি গবেষণায় এটাই খুঁজে পেয়েছেন , এই শাখানদী গুলির দূষণ কমাতে পারলেই গঙ্গার দূষণ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। এ ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ করা যায়, সে ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
কলকারখানার বজ্র, বিভিন্ন শহরের দূষিত জল, কৃষিকাজের বজ্র, কাপড় কারখানার গরম জল, ইট ভাটার বজ্র, পেট্রো কেমিক্যাল বজ্র লাগাতার শাখানদীগুলি বয়ে এনে গঙ্গায় পড়ছে। জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে, অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে। গঙ্গাসহ জলঙ্গি, বাঁকা, দামোদর, রূপনারায়ণ, চূর্ণী, কাঁসাই ও সরস্বতী নদীর দূষণ ও তাঁর জেরে জীব বৈচিত্রের প্রভাব পড়েছে। আগে যেসব মাছ সহজেই নদীতে পাওয়া যেত, এখন সেসব পাওয়া যায়না।
মাছ কম পাওয়ার জন্য ধীবররা নিজেদের পেশা পরিবর্তন করছে। গঙ্গা-হুগলি-ভাগীরথী নদী তীরবর্তী ধীবরদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই আজ পেশা বদলেছেন। যার ফলে আগামীতে মাছের জোগান আরও কমবে। আশীষবাবু বলেন, গঙ্গা ও শাখা নদী গুলির দূষণ একটা মারাত্মক প্রভাব পড়ছে দক্ষিণবঙ্গে। যত দিন যাচ্ছে ততই শাখা নদী গুলি থেকে দূষণের মাত্রা বাড়ছে, যার ফলে মাছের পরিমাণ যেমন কম হচ্ছে বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। ঠিক একই কারণে ইলিশও এখন মিষ্টি জলে ঢুকছে না। মাছ ধরার কাজে সেভাবে লাভ না পাওয়ায় বহু মানুষ পেশার পরিবর্তন করছেন। আগামীদিনে একটা বিরাট মাছের চাহিদা থাকবে কিন্তু জোগান থাকবে কিনা, সন্দেহ। তবে গঙ্গার দূষণের জন্য এত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেই দূষণ রোধ করা যাবে, যদি শাখানদী গুলির দিকে নজর দেওয়া হয়