অবতক খবর,তমাল সাহা,২৫ ডিসেম্বর :: বিজেপি যে একটি বিশাল সংগঠন তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে তারা দুই কিস্তিতে ক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমান সময়ে ব্যাপক মেজরিটি নিয়ে তারা রয়েছে। রাজ্য সভায়ও তাদের সাংসদ তারা বাড়িয়ে নিয়েছে। বিজেপির এখন কুছ পরোয়া নেহি ভাব।

এনআরসি এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে যতই জনমত বিরোধীরা তুলুক না কেন মনে হচ্ছে সে বিষয়ে বিজেপি সতর্ক হয়েছে এবং তারা অন্তরালে আরএসএস-এর মাধ্যমে সেই সিএএ চালুর প্রাথমিক পর্যায় শুরু করে দিয়েছে।

আরএসএস সংগঠনের প্রকৃত সদস্য কে বা কারা তা বোঝা মুশকিল। কারণ তাদের নাম গোপন থাকে। কমিউনিস্ট পার্টিরও সদস্যদের নাম একসময় গোপনে থাকত। কে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য জানা যেত না। যদিও এখন সেই পার্টি সেই জঙ্গী মেজাজ হারিয়েছে। থোড় বড়ি খাড়া- খাড়া বড়ি থোড়-এ পরিণত হয়েছে।

সূত্রের খবর ,আরএসএস সংগঠন নিজেদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিএএ-এর ব্যাপারে।  রীতিমতো ওয়ার্কশপ চালু হয়ে গিয়েছে। সিএএ কি,কেন এবং ভারতবর্ষে তার প্রয়োগ করা জরুরি কেন, সে বিষয়ে আরএসএস কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেদের মতকে দৃঢ়তর করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

বিজেপি মনে করছে সিএএ-এর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে তৈরি করার দরকার ছিল তা অনেকটাই আরেকটি রাজনৈতিক দল কৌশলে তাদের সহযোগিতা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে তিনদিনব্যাপী যে তাণ্ডব চলছে এবং ভিডিও- টিভি মারফত দৃশ্যমান হয়েছে তাতে এক বিশেষ সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হয়ে গেছে বলে বিজেপি মনে করছে।

সেই তান্ডব চলাকালীন এই রাজ্যে ৩০০ কোটি টাকার মত কেন্দ্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করবে এবং রাজ্যের যে সম্পদ নষ্ট হয়েছে তারও খতিয়ান তারা তুলে ধরবে। তারা মনে করছে রাজ্য ওই তান্ডব চলাকালীন বাংলার পুলিশ প্রশাসনিকভাবে কোন দায়িত্ব নেয়নি। অর্থাৎ সেই এক বিশেষ গোষ্ঠীকে তান্ডব চালানোর সুযোগ দিয়েছে তারা। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সেই তাণ্ডব বিজেপির পক্ষে গিয়েছে বলে বিজেপি মনে করছে।

সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্যই শাসকদলের পক্ষ থেকে জোর ‘পায়ে হাঁটা ব্যায়াম’ চলছে বলে আরএসএস-এর এক সক্রিয় কর্মী জানালেন।

এইভাবে আরএসএস সদস্যরা নিজেদের প্রশিক্ষিত করে পরবর্তীতেএলাকায় এলাকায় গোপনে মানুষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে সিএএ কি,কেন, ভবিষ্যতে এটা প্রয়োগ না করলে যে সুদূরপ্রসারী পরিণতি ঘটবে সেটা তারা বর্তমান ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে বোঝাবেন।

তারা প্রশ্ন তুলবেন যে,রাজ্যের শাসক দল যদি প্রকৃতই সিএএ বিরোধী হয় তবে আটজন সাংসদ ভোটদানে বিরত থাকলেন কেন? তারা সেদিন সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন কেন? বা রাজ্যসভায় বিজেপির পক্ষে ভোট পড়েছে তাতে অতিরিক্ত বারোটি ভোটের সংযোজন ঘটেছে,এই ভোট কারা দিয়েছে? অর্থাৎ তারা বলতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গে যারা শাসক দলের সঙ্গে জড়িত তারা আসলে সিএএ চাইছে। তারা মুখ একরকম কথা বলছে, কিন্তু তারা মুখোশ এঁটে অন্যরকম কথা বলছে।

এই বিজেপি কর্মীরা সাধারণ মানুষকে ক্রমাগত বোঝাতে শুরু করেছেন যে, যদি সিএএ লাগু না করা যায় তবে এই রাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত অন্য একটি সম্প্রদায়ের হাতে চলে যাবে। আরও জানা যাচ্ছে, তারা কলকাতার একটি বিশেষ অঞ্চলকে চিহ্নিত করে দেখাবেন যে, সেখানে ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের কতখানি শক্তি এবং দাপট। সেখানে হিন্দুত্বের গরিমা কত ম্লান।

তারা জানতে চাইবেন, হিন্দু ঐতিহ্যমন্ডিত এক মন্দিরের দায়ভার কেন এক অহিন্দুকে দেওয়া হয়েছিল? অন্য এক সম্প্রদায়ের ব্যক্তির হাতে?পাল্টা প্রশ্ন তারা তুলবেন, এমনভাবে কোনো মসজিদের দায়িত্ব কি অহিন্দুরা হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দিতেন? এদিকে মুখে ভারী স্লোগান, মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু- মুসলমান।এইভাবে তারা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে আসলে হিন্দুত্ব জাগরণের প্রচার করবেন।

রামমন্দির নির্মাণ,৩৭০ ধারা বাতিল করে জনমত অনেকটাই তাদের পক্ষে গিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এমনই এই আরএসএস কর্মী জানিয়ে যান। সে যতই লাগাতার আন্দোলন বিরোধী পক্ষ গড়ে তুলুক না কেন, তারা মনে করছেন হিন্দুত্বের তাসেই তারা বাজিমাত করে দেবেন।