অবতক খবর,১৭ অক্টোবর: এবার এক অদ্ভুত পুজো পরিস্থিতি দেখল বীজপুরবাসী। পুজোর চারদিন একেবারেই ফাঁকা কাঁচরাপাড়া এবং হালিশহর। মানুষ দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চলে গেল কল্যাণীতে।
বীজপুর তথা কাঁচরাপাড়া ব্যবসায়িক অঞ্চল। এই পুজোর দিকেই চেয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এই দু’বছর যাবত করোনাকালে পুজোর সময়েই তারা দেখেন লাভের মুখ। কিন্তু এই বছর সবকিছুই যেন মাটি হয়ে গেল বীজপুরে। এইবছর পুজোর বেচাকেনাও সেইভাবে করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এমনটাই জানিয়েছেন জামাকাপড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। পটুয়া শিল্পীরা জানিয়েছেন, অনেক কম দরে প্রতিমা বেচতে বাধ্য হয়েছেন।
আর পুজো! এবছর বীজপুরের মানুষ বলছেন, কোথায় পুজো বীজপুরে? কাঁচরাপাড়া তো ফাঁকা। সব মানুষ ঠাকুর দেখতে গেছেন নদীয়ার কল্যাণীতে।
তারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন,তবে কি বীজপুরের ঐতিহ্যময় পুজোগুলি উঠে যাচ্ছে? নাকি এইবছর বীজপুর ইঙ্গিত দিল যে, আগামী বছরগুলিতেও এইভাবেই নমঃ নমঃ করেই সারা হবে পুজো।
কারণ দেখা যাচ্ছে,একসময়ে যখন রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলি ১০ হাজার টাকা করে পেতো তখন বেশ বড় বড় পুজো হতো বীজপুর তথা কাঁচরাপাড়ায়। কিন্তু এখন যখন ৫০ হাজার টাকা করে ক্লাবগুলি পাচ্ছে তখন তারা নমঃ নমঃ করে পুজো সাড়ছে।
রেকর্ড বলছে গতবছর ২০৪টি ক্লাব রেজিস্টার্ড ছিল। কিন্তু এবছর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০। অর্থাৎ ২৪০টি রেজিস্টার্ড ক্লাব এবছর ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছে। তবে এই ২৪০টি ক্লাবের টাকাগুলো গেল কোথায়? হিসেব চাইছে জনগণ।কারণ এই টাকা আম জনতার। তাদের প্রশ্ন, পুজোর টাকা থেকেও কাট মানির কামাইবাজি চলছে নাতো?
কাঁচরাপাড়া-হালিশহরের সব নামকরা ক্লাব নেতাদাদাদের দখলে। পুজোতেও রাজনৈতিকরণ! এদিকে বলা হচ্ছে এটা উৎসব– সর্বজনীন, সার্বজনীন। আর নেতারা তখন সেজে যাচ্ছন সমাজসেবী, সমাজকর্মী! আশ্চর্য দেশ!
অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন , সরকারের পক্ষ থেকে পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যয়ের হিসেব তদন্ত করা হোক। তারা শ্লেষের সঙ্গে বলেন,আগামী বছর যদি ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় তবে দেখা যাবে তারা সেই টাকা নিয়ে খুঁটি পুজো করেই হাওয়া হয়ে গেছে। কারণ এখন যে যার পকেট ভরতে ব্যস্ত। শারদোৎসব একটা কামাইয়ের সুযোগ। হিসেব নিকেশ দিতে হয়না, কামিয়ে তাও। অন্যদিকে পুজোর নামে প্রমোটার ,ইটভাটার মালিক, বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও দাদা নেতার কামাই থাকে।
এই পুজো নিয়ে সাধারণ মানুষের যে আশা থাকে,বীজপুরের পুজোর যে একটা ঐতিহ্য রয়েছে তা তারা আজ ভুলতে বসেছে। শুধু তাই নয়,বীজপুরের পুজোকে কেন্দ্র করে যে কত মানুষের রুটিরুজি জড়িয়ে আছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোর। এখন একটা প্যান্ডেমিক সিচুয়েশন চলছে। কিন্তু তা তো গত বছরেও ছিল। তা সত্ত্বেও এবছরের তুলনায় গতবছর বীজপুরে বেশ কয়েকটি বড় পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এবছর বীজপুরের যা পুজো পরিস্থিতি,তা সত্যিই অকল্পনীয়।
বিরোধীরা আরো বলেন,এই সরকারের আমলে তো সবকিছুই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে,বীজপুরের ঐতিহ্যময় পুজোর এইরকম পরিস্থিতি দেখে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
বীজপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা তথা অঞ্চল কল্যাণী এবছর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিরোধীরা এবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন যে, সরকার যদি এইভাবেই কোন খোঁজখবর ছাড়া অর্থাৎ সার্ভে ছাড়া ছোটখাটো পুজো কমিটিগুলোকে টাকা দিতে থাকে তাহলে দেখবেন আর বড় পুজো হবে না। এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের একটু ভাবা উচিত এবং সার্ভে করা উচিত যে,কারা এই অর্থ নিয়ে কিরকম পুজো করেছে অথবা কি খাতে সেই অর্থ ব্যয় করছে। আর এইবছর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছর বিবেচনা করতে হবে যে, কারা পুজো বাবদ এই অর্থ পাবেন এবং কারা পাবেন না, বিশেষ করে বীজপুরের ক্ষেত্রে। কারণ এই অর্থ সাধারণ মানুষের। আর সাধারন মানুষের টাকায় এইভাবে জলে চলে যাবে তা কিন্তু মানুষ বেশিদিন মেনে নেবে না।