অবতক খবর ২৩সে মার্চ ২০২২ : গত ১৯শে মার্চ হালিশহর শ্যামাসুন্দরী ঘাটে স্নান করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়। চন্দ্রশেখর চাঁদ তার পরিবারকে নিয়ে ওই ঘাটে স্নান করতে গিয়েছিলেন। অপরদিকে ঠিক সেই সময় ওই ঘাটেই স্নান করতে যান দেবাশীষ পাল, সুদীপ সরকার সহ তাদের কিছু সঙ্গী সাথীরা। এই দুই পক্ষের মধ্যেই স্নান করা নিয়ে গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে দুই পক্ষেরই পুরুষেরা কমবেশি নেশাগ্রস্ত ছিলেন।
অভিযোগ এই গণ্ডগোলের চন্দ্রশেখর চাঁদকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই গন্ডগোল ব্যাপক আকার নেয়, যার ফলে আশেপাশের মানুষ হইচই শুরু করে দেয়। গন্ডগোলটি স্নানের ঘাট থেকে রাস্তায় চলে আসে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় নেতৃত্বরা।
সেই সময় হালিশহর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষ(সোনাই) তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানতে পারেন যে দেবাশীষ পাল এবং সুদীপ সরকার এই দুজন মিলে চন্দ্রশেখর চাঁদকে ব্যাপক মারধর করেছেন। যার জেরে এই দু’জনকে স্থানীয়রাই ব্যাপক মারধর করে। ঘটনাস্থলে শুভঙ্কর বাবু গিয়ে তাদেরকে বীজপুর পুলিশের হাতে তুলে দেন।
হালিশহর খাস বাটির বাসিন্দা চন্দ্রশেখর চাঁদ,পেশায় তিনি এয়ারফোর্সের চাকুরীজীবী। তাঁর ভাই কুণাল চাঁদ বীজপুর থানায় দেবাশীষ পাল এবং সুদীপ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। যেহেতু এর আগে পুলিশ তাদের আটক করে রেখেছিল তাই অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দেয় পুলিশ।
এই ঘটনা গত ১৯ মার্চের। ঘটনার চারদিন পর আজ জানা যায়, ওই অভিযোগে শুধু ওই দুজনের নাম নয়, বরং অভিযোগ রয়েছে আরও ১০ জনের নামে। গতকাল রাত ২টো নাগাদ পুলিশ রাজা মালো (শুভঙ্কর ঘোষের ঘনিষ্ঠ) নামে ওই যুবককে আটক করে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসীরা জানান, কি কারণে রাজাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দেয়নি পুলিশ। পুলিশ নাকি শুধু এটুকুই জানিয়েছে যে, আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান তথা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভঙ্কর ঘোষ,রাজাকে কেন আটক আটক করা হয়েছে,এই প্রশ্নের উত্তর তিনি পুলিশের কাছে জানতে চাইলে, পুলিশ তাকে জানায় যে আর অন্য জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেও আটক করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে তাঁর আত্মীয়সহ তাঁর ক্লাবের ছেলেরা।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে আজ পুলিশ ফোন করে এবং থানায় এসে দেখা করতে বলে। কিন্তু তারা এখন আতঙ্কিত এবং আশ্চর্যচকিত।
তাদের বক্তব্য যে,যাদেরকে পুলিশ ফোন করছে ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই।
তারা বলছেন যে, আমরা কিছুই জানি না। আমরা ঐ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। অকারণে পুলিশ রাজাকে ধরে নিয়ে গেছে এবং আমাদের ফোন করে থানায় দেখা করতে বলছে। আর কারণস্বরূপ জানাচ্ছেন যে এয়ারফোর্সের এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে এবং সেই ঘটনায় তারা অভিযুক্ত।
অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলে যে, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে,সেদিন আসলে ঘটনা কি ঘটেছিল তার আমরা কিছুই জানিনা।
অন্যদিকে সন্তোষ সিং নামে এক ব্যক্তি একটি ফোনের কথোপকথন বাজারে ছেয়ে গেছে। সন্তোষ সিং আহত চন্দ্রশেখর চাঁদের ভাই কুণালকে ফোন করে জানান যে চেয়ারম্যান বলেছেন এই ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে। ফোনে পাল্টা কুণালবাবু বলেন, আমার দাদা অসুস্থ আমি এখন কিছুই বলবো না। কিন্তু সন্তোষ সিং চেয়ারম্যান রাজু সাহানীর নাম করে কুণালবাবুকে চাপ দিতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য।
এ বিষয়ে শুভঙ্কর বাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,এই বিষয়টি আমরা কিছুই জানিনা। তবে ঐদিন ঘটনাস্থলে আমি নিজে গিয়ে দুই অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের ওয়ার্ডের ছেলেদের নাম কেন জরালো, আর কেনইবা রাজু সাহানির নাম করে ওই সন্তোষ সিং নামক ব্যক্তি যিনি একসময়ে রাজু সাহানীর নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন, তিনি কেনইবা কুণালকে চাপ দিচ্ছে রাজু সাহানির নাম করে,সেটাও আমার জানা নেই। তবে আজ আমি জানতে পারি যে, আমার ওয়ার্ডের ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিয়ষটি আমরা উচ্চ নেতৃত্ব এবং বিধায়ককেও জানানো হয়েছে। এই ঘটনার সমস্ত তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে এবং সন্তোষ সিংয়ের ওই অডিও ক্লিপ যাতে সে রাজু সাহানীর নাম করে বলছে যে, এই দশজনকে ফাসাতে হবে সেই ক্লিপটিও আমাদের কাছে রয়েছে।
এরপর আমরা কুণাল চাঁদকেও ফোন করি,তখন তিনি বলেন, যেহেতু আমরা প্রত্যক্ষদর্শী সেই কারণে দুজনের নামেই অভিযোগ করেছি। কিন্তু রাজু সাহানির নাম করে সন্তোষ সিং, তিনি ফোন করে ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার কথা বলছেন।
আর ঘটনাতেই যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে হালিশহর পৌরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার নাম করে যে কেউ ফোন করতে পারে, কিন্তু আমি বলব পুলিশকে এই বিষয়ে তদন্ত করতে। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানিনা। সন্তোষ সিং কাকে ফোন করে কি বলেছে তাও আমার জানা নেই। আমি শুধু এইটুকুই জানি, ঐদিন স্নানের ঘাটে একটি গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছিল। শুভঙ্কর ঘোষ আমাকে ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছেন এবং তিনি দুই পক্ষের ঝামেলা মিটমাট করার চেষ্টা করেছেন। তখন আমি বলেছি যে,তোমরা মিটমাট করে নাও, আমি এর মধ্যে নেই। আইন আইনের পথে চলবে। আর সন্তোষ প্রসঙ্গে আমি কিছু বলবো না। কারণ সন্তোষের বিষয়টি আমার একেবারেই অজানা।
তবে যে অডিও ভাইরাল হয়েছে,তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অর্থাৎ চেয়ারম্যান গোষ্ঠী এবং ভাইস চেয়ারম্যান গোষ্ঠীর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। অথবা এও হতে পারে যে, কেউ পরিকল্পিতভাবে এই দুজনের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি অথবা দুটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি করে গন্ডগোল করতে চাইছে।
তবে এই গন্ডগোল আগামীতে কোন পর্যায়ে যায়,কি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হালিশহরে, আমরা সব দিকেই নজর রাখব এবং আপডেট দিতে থাকব।সুতরাং নজর রাখুন অবতকে।
অন্যদিকে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশের প্রথমে তদন্ত করা উচিত যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা আদেও অভিযুক্ত কিনা। পুলিশের কাজ তদন্ত করা। পুলিশ তদন্ত না করেই আমাদের ঘরের ছেলেদের ফোন করে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রাতের অন্ধকারে চোরের মত এসে পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে গেল। পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত। না হলে পুলিশের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে।
তারা আরো বলেন, আমাদের ঘরের ছেলে,কাউন্সিলর তথা ভাইস-চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষকে যদি এইভাবে বদনাম করার চেষ্টা হয় তবে তা আমরা মেনে নেব না এবং বৃহত্তর আন্দোলনে যাব এর বিরুদ্ধে।