ভাটপাড়া এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। একদিন এখানে দাঙ্গাবাজির শিকার হয়েছিল দুই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
ভট্টপল্লী- ভাটপাড়া। এখানে রয়েছে বিদ্যোৎসাহী সমাজ।কাঁকিনাড়া— মেহনতী মানুষ অধ্যুষিত অঞ্চল।
দাঙ্গায় মরেনি কোনো পুলিশ বা নেতা!
যারা অসহায় প্রাণ দিল
তাদের জন্য ইতিহাস লিখবে
এক পাতা?
সেই দুই ফুচকাওয়ালা
তমাল সাহা
চারচাকার সেই ঠ্যালাগাড়ি দুটোর
একটা আঠারো নম্বর গলিতে
অবহেলায় পড়ে আছে।
আর একটি পড়ে আছে
কাছারি রোডে— কাঁকিনাড়ায়।
কাঁচের বাক্সে ঠাসা গোলগোল ফুচকা
কাঁচের ভেতর থেকে খুঁজছে দুটি মুখ।
বিটনুন, তেঁতুল, লেবুএবং জলের হাঁড়ি
— এরা সব দুটি হাতের
দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আছে।
ফুচকার পুর—
সেদ্ধ আলু, ছোলা, মটর
একসঙ্গে আর কখনো একসঙ্গে মিশিয়ে
চটকে মাখবে না রামবাবু ও ধর্মবীর।
রামু ভাইয়া! দহি বড়া দাও,
বলবে না আর ছোট্ট মুন্নি, বুড়ুয়ারা।
ধর্মদা! আমাকে দই ফুচকা দিন—
পাড়ার বৌদির এমন কন্ঠস্বর
আর কোনোদিন শুনবে না
ফুচকা বিক্রেতা ধর্মদা।
কাকু আমারটায় কম লঙ্কা দিও—
একথা বলবে না আর স্কুল
ফেরতা দুটো মেয়ে, যারা একসাথে ফুচকা খেতে আসে।
ধর্ম কাকু আর ভাঙা বাংলায় বলবে না—
আরে, তুমাদের তো বহুৎ গোলায় গোলায় ভাব আছে!
কি ঝাল ঠিক আছে? আর নুন লাগবে?
বা আজকা দহি থোড়া পাতলা হো গিয়া —
এসব কথা শূন্যে ভাসতে থাকবে।
ফুচকাওয়ালা রামু আর ধর্মবীর
সমাজের পোকা-কাটা মানুষ।
শেষ বাজারের বাড়তি আনাজপাতি
কিনে খায় ওরা।
ওদের জীবনের পুঁজি মেহনতের ঘাম
জীবনের দাঁড়িপাল্লায় নেই কোনো দাম।
রাম আর ধর্ম
লাশ হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়।
দাঙ্গাবাজরা সটকে পড়ে
পুলিশের গুলিতে
উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
যার যায় তার যায়…
মা বৌ ছেলেপুলের আর্ত চিৎকার,
চোখের জল আর কান্না—
ফুরোয় না, ফুরোয় না।
গণতন্ত্রের মাস্টার মশাইরা
কোনোদিনই এসব শুনতে পান না।