সিংহ গর্জন করিতেছে–দ্য লায়ন ইজ রোরিং।
অবতক -এর বিশেষ প্রতিবেদন
অবতক খবর,১৩ জুলাইঃ সিংহ গর্জন করিতেছে ছোটবেলা থেকেই এই বাক্যটি শুনে আসছি। এর ইংরেজি হবে কি বল্? মাস্টারমশাই জানতে চেয়েছিলেন। তিনি ছাত্রের উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিজেই জবাব দিয়েছিলেন– দ্য লায়ন ইজ রোরিং।
তিনি জীবজন্তু চেনার বিষয়ে বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে যেমন নারীরা দেখতে সুন্দর,সব নারীরাই বিভিন্ন বৈচিত্রে সুন্দর। তেমনি পশু পাখির মধ্যে দেখবি যেটা দেখতে সুন্দর সেটাই পুরুষ। পশু ও পাখিদের মধ্যে এভাবেই পুরুষ ও নারীর তফাৎ করা যায়। দেখবি পুরুষ সিংহের কেশর আছে সিংহীর এসব নেই। ময়ূরের পেখম আছে, ময়ূরীর পেখম নেই। মোরগ উজ্জ্বল বর্ণের পালক বিশিষ্ট। তার মাথার দিকে চেয়ে দেখবি উজ্জ্বল পালকের পতাকা। কিন্তু দেখবি মুরগি তুলনামূলকভাবে মোরগের চেয়ে অসুন্দর। আর শোন, পুরুষদের মধ্যে একটা দুর্বৃত্তপনা আছে যেটা অতটা মেয়েদের মধ্যে নেই। মানুষকে নম্র বিনয়ী হতে হয়।
ছাত্র বলে, অশোক স্তম্ভ তো জাতীয় প্রতীক। সিংহ তো হিংসার প্রতীক। তবে সিংহ থাকবে কেন? আর জাতীয় প্রতীকে সিংহগুলো কেমন যেন ম্যাদামারা। এমন সিংহ জাতীয় প্রতীক হলে জাতিকে দুর্বল মনে হয় না স্যার! মাস্টারমশাই বলেন, ম্যাদামারা মানে? ছাত্র বলে ওই নিরীহ কেমন শান্তশিষ্ট! এর বদলে সিংহীর ছবি দিলেই তো হতো। মাস্টারমশাই বলেন,তুই ঠিকই বলেছিস। আসল শব্দটা হল হিংস্র। তা থেকে হিংস। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যে বর্ণ স্থান পরিবর্তন করে তা হয়েছে সিংহ। ভারতবর্ষের মূল মন্ত্র হচ্ছে অহিংসা। বুদ্ধদেব বলে গিয়েছেন অহিংসাই পরম ধর্ম। হিংসা নয়, মানবপ্রেম ও অহিংসার দিকে জয়যাত্রাই ভারতবর্ষের বৈশিষ্ট্য। তাই গর্জনশীল নয়, সিংহের শান্ত রূপই হয়ে উঠেছে ভারতবর্ষের প্রতীক। ভারত বৈচিত্রের দেশ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় মহা তীর্থের দেশ। বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।
সারনাথের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল এই অশোক স্তম্ভ। কিন্তু এই যে নতুন অশোক স্তম্ভটি তৈরি করা রয়েছে তার মধ্যে সূচিত হচ্ছে হিন্দুত্বের গর্জন। শান্তি ও সংহতির প্রতীক অশোক স্তম্ভটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ভারতবর্ষের ইতিহাসে। কলিঙ্গ যুদ্ধে কত মানুষ নিহত হয়েছিল, রক্তের নদী বয়েছিল একদিন কলিঙ্গ মানে বর্তমান ওড়িষায়। তার নিশ্চয়ই ইতিহাস বইতে পড়েছিস।
এই দৃশ্য দেখে চন্ডাশোক ধর্মাশোকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিকে শান্তির রূপকার সম্রাট অশোক, এই ভারতবর্ষ। এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকট হতে চলেছে ধর্মীয় সন্ত্রাস। ফ্যাসিবাদের নগ্ন মুখ প্রকাশের আগে উপরের অন্তর্বাস খুলতে চায় হিন্দুত্ব। সে চায় হিন্দুত্বের আগ্রাসন। আগামীতে তার রূপ কি হবে তার মডেল এই গর্জনরত সিংহ। এই সিংহটি বসছে ভারতীয় গণতন্ত্রের আধার সংসদ ভবনের মাথায়। মূর্তিটি ব্রোঞ্জের নির্মিত। দৈর্ঘ্য ৬.৫ মিটার ও ওজনে ১৫০০ কিলোগ্ৰাম।
শ্বদন্ত অর্থাৎ পাশব দন্ত বিকশিত গর্জনশীল মানুষখেকো সিংহ–এটা কি হতে পারে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রতীক? জাতীয় প্রতীককে এভাবে অসম্মান করা হয়েছে। করা যায়? আন্তর্জাতিকে কি দৃষ্টান্ত রাখতে চাইছে ভারতীয় রাষ্ট্র?
ফ্যাসিবাদ এভাবে ক্রমে ক্রমে রুটমার্চ করতে চাইছে এই মহান বৈচিত্রের দেশে। দুটি দল, এরা নিজেদের রাজনৈতিক দল বলে মনে করে। রাজনীতি শব্দটির যে ব্যাপক অর্থ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতি, মানবতার নীতি,তাকে এরা হিংস্রতার বিচ্ছিন্নতার পঙ্কে ডুবিয়ে দিতে চাইছে। এই দুটি দল তাদের মুখোশ সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করে ফেলেছে। পয়গম্বর এবং কালীকে বিষয় করে সাম্প্রদায়িক বৈরিতা, ধর্মীয় হিংসার বাতাবরণ তৈরির একটি দুর্দম প্রচেষ্টা চলছে। সম্রাট অশোককে এরা অপমানিত করতে চাইছে।
সিংহ গর্জন করিতেছে– দ্য লায়ন ইজ রোরিং। শুয়োরের খোঁয়াড়ের মাথায় বসিয়েছে এই অশোক স্তম্ভ।সাবাস! গণতন্ত্র সাবাস!