অবতক খবর,১ আগস্ট,নদীয়া : রাজ্যের ৭ টি জেলা মতো-নদীয়া জেলাকেও দুই ভাগ করে নতুন রানাঘাট জেলা তৈরীর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা শোনার পর থেকেই বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম আবেগ তৈরি হয়েছে।

নদীয়া শব্দ পুরোপুরি বাদ দিয়ে রানাঘাট রাখা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। জেলা ভাগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা সকলেই স্বীকার করছেন। তারা বলছেন ,নতুন জেলা গঠিত হলে মানুষের সুবিধাই হবে। তার কারণ, কল্যাণী এবং হরিণঘাটা থেকে যেকোনো কাজের জন্য মানুষকে কৃষ্ণনগর ছুটে যেতে হত। সে ক্ষেত্রে নতুন রানাঘাট জেলা হওয়ায় তাদের এখন আর বেশি দূর যেতে হবে না।

তাই নতুন জেলাকে তারা সমর্থন করছেন। কিন্তু নতুন জেলার নামকরণ নিয়ে তারা অনেকেই সহমত পোষণ করছেন না। তার কারণ, নদীয়া জেলা শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু গুণী মানুষের স্মৃতি। বিশেষ করে চৈতন্যদেবের নাম নদীয়া জেলার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শান্তিপুরের অদ্বৈত আচার্য সহ শান্তিপুরের বিভিন্ন রকম বিগ্রহ বাড়ির সঙ্গে নদীয়া নামটি বিশেষভাবে আবেগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। শান্তিপুরের গৃহ শিক্ষক কাশীনাথ রায় বলেছেন,’ নদীয়া নামটি না থাকায় নতুন জেলার নাম রানাঘাটকে আমি মেনে নিতে পারছি না। তার কারণ, নদীয়া নামের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত রয়েছে। আমি শান্তিপুরের মানুষ। শান্তিপুরের নামের সঙ্গে চৈতন্যদেব , অদ্বৈত আচার্যের নাম জড়িত রয়েছে।

এখানে এখন থেকে আমরা আর নদীয়া নাম ব্যবহার করতে পারবোনা,এটা হয় না। তাই আমি চাই , রানাঘাট নামের পরিবর্তন হয়ে নদীয়া দক্ষিণ রাখা হোক।’ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সনত চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। তার বক্তব্য,’ রানাঘাট জেলা ঘোষণা হবে , তা যেন আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। তার কারণ এর আগেই রানাঘাট পুলিস জেলা করা হয়েছিল। আমাদের দলের ক্ষেত্রেও রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা করা হয়েছে। নতুন রানাঘাট জেলা হওয়ায় এবার সাধারণ মানুষের প্রশাসনিক কাজ কর্মের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। মানুষকে আর কৃষ্ণনগর ছুটে যেতে হবে না।’ যদিও নতুন জেলার নাম শুধুমাত্র রানাঘাট, কিছুটা অবাক গেলেন পেশায় পুরোহিত গোবিন্দ মুখার্জি। বললেন,’ তাহলে আমরা আর নদীয়া বলতে পারব না? এটা কেমন ব্যাপার হল? আমি মেনে নিতে পারছি না।’ শুধু গোবিন্দ মুখার্জিই নয়, রানাঘাট নামের সঙ্গে নদীয়া শব্দটি জুড়ে না থাকাটা তাদের কাছে বিস্ময়কর বলেই মনে হচ্ছে। নতুন জেলা গঠন হলে জেলাশাসকের অফিস সহ সমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিক নিয়োগ এবং জেলা শাসক নিয়োগসহ পরিকাঠামো তৈরি করতে যে বিশাল পরিমাণ খরচ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলার সম্পাদক ডঃ সোমনাথ কর।

তিনি বলছেন,’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কোষাগারে টাকা নেই, নতুন জেলা গঠন হলে জেলাশাসকের অফিস সহ সমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিক কে নতুন করে নিয়োগ করা এবং পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য যে বিপুল পরিমাণ খরচ হবে, এটা কি করে মিটবে, তা নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই নতুন জেলা তৈরি হওয়াকে সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবে আমি সমর্থন করলেও এর নামকরণ নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। রানাঘাট নয়, নদীয়া দক্ষিণ জেলা রাখলে মানুষের আবেগকে আঘাত করা হতো না।’ নদীয়ার গর্ব চৈতন্যদেব,অদ্বৈত আচার্য মহাকবি, কৃত্তিবাস। শান্তিপুরের সঙ্গে নাম জড়িত রয়েছে করুণানিধানের। শান্তিপুরের রাস, ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি, কল্যাণী ঘোষপাড়ার সতীমায়ের মেলা, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, বাদকুল্লার দুর্গাপুজো,এ সবই নদীয়া নামের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে। অনেকেরই মতে নদীয়া জেলার মধ্যে জুড়ে থাকা এইসব ঐতিহ্য নতুন রানাঘাট জেলার নামের সঙ্গে খাপ খায় না। নদীয়া বাসী বলে যে গর্ব অনুভব করা যায়, রানাঘাটের নামকরণে তার বিচ্যুতি ঘটে। তাই রানাঘাট নামকরণকে কোনভাবেই সমর্থন করা যাচ্ছে না।

দেশভাগের পর উদ্বাস্তু হিসাবে বহু মানুষ নদীয়া জেলা হিসেবেই ঠাঁই নিয়েছিলেন। রানাঘাট জেলা হলে সবই যেন ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। এর আগেও জেলা এসপি অফিস নিয়ে যাওয়া হয়েছে কল্যাণীতে, তাতে শান্তিপুর রানাঘাট মধ্যবর্তী এলাকার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে আরো। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে, ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে চলেছে।