পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনের আজ সপ্তম দিন। অনশন কর্মসূচির আজ দ্বিতীয় দিন। জাতির মেরুদণ্ড আজ পথে অনশনে, ভাবা যায়! গণতন্ত্র! গণতন্ত্র বলে রাষ্ট্র ফুটানি দেখায়!
বর্ণমালারা ছুটে আসছে মাস্টারমশাইদের দিকে
তমাল সাহা
মাথার উপরে বিশাল অগ্নিকুণ্ড
প্রচন্ড উত্তাপ ছড়াচ্ছে। উত্তাপের তীব্রতা কমাতে সে যত পারে উপরে উঠে যাচ্ছে।
সামান্য ত্রিপলের ছাউনির নীচে মাস্টারমশাইদের অনশন আন্দোলন চলছে।
সূর্য উজ্জ্বল আলোর বিস্তারে মাস্টারমশাইদের মুখ দেখতে চায়।
কিন্তু সে তো নিরুপায়। তার উত্তাপে মাস্টারমশাইরা ঝলসে পুড়ে যায়। তাই সে উত্তাপের মাত্রা কমাতে ঊর্ধ্বে উঠে যায়, মনে লেগে থাকে তার বিষাদ দুঃখ।
তাহলে কি সূর্যের চোখ দিয়েও জল ঝরে?
সে চায় শিক্ষক মশাইরা যেন গরমে হাঁসফাঁস না করে। তাদের জন্য সে ও আত্মত্যাগ করে।
অনশন চলছে। সেই ধর্মতলার মতো এই অনশন মঞ্চে কোনো পর্দা নেই। যবনিকার আড়ালে কত কি ঘটে! না। এখানে পর্দা নেই। এটা আমাদের সাবেকি চতুর্দিক খোলা যাত্রামঞ্চ যেমন থাকে। মুক্তমঞ্চ। মুক্তাঙ্গনে প্রকাশ্যে লড়াই। যা হবে সামনাসামনি। কনসার্ট বাজাচ্ছে লড়াকু মাস্টারমশাইদের স্লোগান। মাইকে বক্তৃতা দিয়ে সাহসে বলীয়ান হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন যুদ্ধের সাথীরা। স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা তাদের পাশে থাকতে চায়। লড়াইয়ের সংবাদ বাতাস দূর থেকে দূরান্তে নিয়ে যায়।
সন্ধ্যা হয়ে এলে চাঁদ নেমে আসে। জ্যোৎস্না ছড়ায় জমায়েতের মাথার ওপর। উত্তরে ধ্রুব নক্ষত্র স্থির থাকে। অন্যান্য নক্ষত্রেরা ত্রিপলের ফাঁক দিয়ে অনশন যাত্রীদের দিকে দেখে আর বলে, জ্বলে ওঠো, জ্বলে ওঠো, আমাদের মতো ছড়িয়ে পড়ো চতুর্দিকে।
বাংলার বর্ণমালা এক দুর্ধর্ষ বর্ণমালা। স্বরবর্ণ অ এবং আ দিয়েই জীবনের নির্মাণ। অ বলে ওঠে এই তো আমি, অ-য়ে ‘অনশন’। আ সাড়া জাগিয়ে বলে এই তো আমি, ‘আন্দোলন’। অ আবার বলে অ-য়ে অন্ন, পেটের দানাপানি। অনশন আর আন্দোলন না করলে কি এত সহজেই তাকে পাওয়া যায়! অ বোঝাতে ই থাকে। আবার বলে ওঠে, আমি অশনি! আমি অনীক। মাস্টারমশাই তোমার ভয় কি? আমরা স্বরবর্ণেরা তোমার পাশে আছি। তোমরা কমরেড হয়ে ওঠো।
এইসব দেখে আর হাত কামড়াতে থাকে বাংলার ব্যঞ্জনবর্ণরা। তাহলে কি আমরা পিছিয়ে পড়বো, স্বরবর্ণের কাছে ? হঠাৎ করে তারা সোচ্চারে বলে ওঠে, আমরা আছি। আমরাও আছি। তালব্য-শ, দন্ত্য-স সোচ্চার হয়ে ওঠে।বলে, তোমরা তালব্য-শ-য়ে শিক্ষক আর শাসক হয় তা জানো না? আর শাসক মানেই তো শোষণ। তাহলে? দন্ত্য-স হল আসল স। সেই তোমাদের দেখাতে পারে আনন্দময় মুখ! দন্ত্য-স-য়ে সংগ্রাম, সংগ্রাম এবং সংগ্রাম। আর তারপরেই তো দন্ত্য-স বিশাল হয়ে তোমাদের কাছে এনে দেবে সফলতা-সাফল্য। আর সূর্য থেকে শশী জাগতিক সবাই দন্ত্য-স হাতে তুলে নিয়ে তোমাদের জানাবে স্যালুট ও সেলাম।
শেষমেষ অ-বর্ণটি আবার বলে ওঠে, ও মাস্টারমশাই! অ-য়ে অস্ত্র মনে আছে তো? আর অনুস্বার বর্ণটির দিকে তাকিয়ে দেখো, তোমাদের হাতে তুলে দেবে বলে ঢাল ও তলোয়ার নিয়ে কেমন দাঁড়িয়ে আছে!