আজ সুরের জাদুকর শচীন দেব বর্মনের জন্মদিনঃ অবতকের প্রতিবেদন

দখিনা বাতাসের গান
তমাল সাহা

হেমন্তের অরণ্যে তখন আমি দাঁড়িয়েছিলাম বিষণ্ণ বেলায়।
অরণ্যের আলোছায়ায় পাতাগুলি ঝরে যায়।
তখন তুমি দখিনা হাওয়ার সঙ্গে কথা বলছিলে আবেগী সাদাসিধে সুরে–
এসব কথা আমাকে বাতাসই জানায়।

ভালোবাসা কিভাবে ছুঁয়ে ফেলে চোখের আকাশ
কোথায় লুকিয়ে থাকে আশ্চর্য স্পর্শের তৃষা
উতল অনুরাগে ডুবে থাকে হৃদয়– সবই নাকি জানিয়েছিলে তুমি দখিনা বাতাসকে, তা দিক থেকে অন্যদিকে উড়ে যায়।

ঋতুঘন অনুভূতি প্রগাঢ় ছিল তোমার
দাবদাহেও ভালোবাসা যায় না শুকিয়ে
বর্ষার স্নানে যেতে চায় ভালোবাসা
শরতের জ্যোৎস্নায় তোমার ভালোবাসা চন্দ্রাণী হয়ে ওঠে বুঝি।
হেমন্তের উদাস ধানকাটা মাঠে তোমার ভালোবাসা বিষাদ ছড়ায়
শীতের শীতলতায় কেমন হয়ে যাও যেন তুমি যদিও তোমার গভীর চোখের অতলে বসন্ত বিলাসের সুবাস পাওয়া যায়।
সে তো কন্ঠের সুরের জাদুতেই বোঝা যায়!

তুমি এসেছিলে পরশু, কাল কেন আসোনি,
আজও কি আসবে না—
তুমি কি আমায় ভালোবাসো নি!

ওই যে গানের সুরে কত কি বলো, বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি তা বললে কি হয়? এখনো তোমার কন্ঠ-বাঁশি শুনতে পাই সে তো ব্যতিক্রমী নিশ্চয়।

তাকডুম তাকডুম বাজে! সে তো তোমার কন্ঠের বোল। আরে এ যে শচীন কত্তা! যে বাঙালি চিনতে অক্ষম তার নামে দাও হরিবোল।

আর কি বলো? বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয় দিয়েছো দোলা– এটাই তো বাঙালিয়ানা। তোমাকে নিয়ে আমাদের পথচলা।

তুমি আর নেই সেই তুমি, হায়!
কি করি যে মন নিয়া– সে তো তুমি নিজেই জানো তোমার জন্য কেন এমন উথালপথাল হয় আমাদের হিয়া।

কে যাস রে ভাটি গাঙ্গ বাইয়া– কে যায়, কোথায় যায় বলো গো শচীন কত্তা! কেন মধুর এমন তোমার সানুনাসিক উচ্চারণ, কেন এত মাদকতা কে জানে? তোমার গানেই আমাদের জীবন মরণ।

সবচেয়ে বড় কথা তোমার সুরের টানে মানুষের হৃদয়ে মন্থন, তোমার গানে মানুষের আমন্ত্রণ, মানুষকে নিমন্ত্রণ।

তোমার গানগুলি কবিতার কথা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই দেশের নদী নালা মাঠ পার হয়ে জলস্রোতে ভাটিয়ালি হয়ে যায়।

তোমার গানের কথা জীবন পতাকা তুলে ধরে
তুমি আশ্চর্য বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াও পরিব্রজনের হাওয়ায় হাওয়ায়!