পরাধীন ভারতে শোষণ মুক্তির অন্যতম যোদ্ধা কৃষক নেতা তিতুমীরের আজ শহীদ দিবস

বাঁশের কেল্লা, সামনে দাঁড়িয়ে তিতুমীর

তমাল সাহা

বাবা কইল, ওরে তমু! এইবার পরীক্ষায় কিন্তু তিতুমীর আইবো। করোনা কাল হইলে কী হইব! দিল্লিতে স্বাধীনতার পর এই যে কৃষক সংগ্রাম চলতাছে তা দুনিয়ায় একটা ইতিহাস সৃষ্টি করতাছে। তো তিতুমীর কৃষক সংগ্রাম করছিল। তাই তিতুমীর এইবার ইম্পরট্যান্ট। ভালো কইরা বানান কইরা তিতুমীরটা মুখস্ত কইরা যা! আমার বাবা হোগলা পাতার স্কুলে মাস্টারি করতো।

তো আমি মুখস্থ করতে লাগলাম….

সেটা ১৮৩১ সাল ১৩ নভেম্বর। যখন তিতুমীর দেখল যে ব্রিটিশ সৈন্যরা কর্নেল স্টুয়ার্ড-এর নেতৃত্বে চারদিক ঘিরে ফেলেছে, তিনি তখন ঘোষণা করলেন, জয় স্বাধীনতা! ভাইসব, একটু পরেই ব্রিটিশ সৈন্যরা আমাদের বাঁশেরকেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াই আমাদের করতেই হবে– জান কবুল। লড়াইয়ে হার-জিত আছে। তাতে আমাদের আপত্তি কি? আমাদের এই মৃত্যুতে আমাদের ছেলেপুলেরা অনুপ্রাণিত হবে। তারা দেশের মুক্তির জন্য লড়বে।

তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আজ পৃথিবীর ইতিহাস। সেটা ছিল ১৮৩১ সাল ২৩ অক্টোবর। তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। বাঁশ ও কাঁদা দিয়ে দোতলা একটা বাঁশের কেল্লা তৈরি করলেন। ফসল ফলানো হাতে সেই মাটির মানুষেরা যারা মাটিকে শস্যমাতা রূপে গড়ে তোলে তারাই কড়াপড়া শ্রমিষ্ঠ হাতে আশ্চর্য এই বাঁশের দুর্গটি গড়ে তুলেছিল। কেল্লাটি ছিল বারাসাত থেকে কিছুদুর দূরে বাদুড়িয়ার নারকেলবেড়িয়া গাঁয়ে। তিতুমীর নিজেই ছিলেন পালোয়ান এবং লাঠিয়াল। তিনি প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন জমিদারদের বিরুদ্ধে। জমিদাররা ছিল হিন্দু জমিদার। তাদের ওপর দাড়ির খাজনা ও মসজিদ কর চাপানো হয়েছিল। এর প্রতিবাদে তিনি ধুতি বর্জনের ডাক দেন এবং তাহবান্দ নামে এক ধরনের কাপড় পরার নির্দেশ দেন। এই প্রথম বয়কট আন্দোলনের সূচনা।

তিতুমীর একসাথে দুটি লড়াই চালিয়েছিলেন। স্থানীয় জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং নীলকর সাহেবদের প্রজা শোষণের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে পড়লেন তিতুমীর। তার আগেই ২৪ পরগনা নদিয়া ও ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তিতুমীরের নেতৃত্বে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষক অংশগ্রহণ করেছিল। সাত দিন ধরে সে কী যুদ্ধ! নভেম্বর মাস। ১৩ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত একটানা লড়াই। লড়াই! তীর তলোয়ার ধনুক বর্শা বল্লম কুড়ুল গাদা বন্দুক দেশিয় হাতিয়ার নিয়ে ব্রিটিশের ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। এই যুদ্ধে কামান পর্যন্ত ব্যবহার করেছিল ব্রিটিশরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯ নভেম্বর তিতুমীর এবং ৪০জন বীর কৃষক শহীদ হয়ে গেলেন। কামান দেগে ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা উড়িয়ে দেওয়া হলো।

তিতুমীর প্রাণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই ভিন্ন শোষণ মুক্তির অন্য কোনো পথ হতে পারে না। তার জন্য চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা, সাহস এবং জাতীয় সংহতি।

জমি বীজবতী। খিদে শুধু পেট বোঝে। সে হিন্দু মুসলমানে ফারাক বোঝেনা।

চাষির কোন ধর্মীয় বিভেদ নেই। চাষই তার ধর্ম।