জনৈক তারাপদ
তমাল সাহা
গরিব শব্দটি নিয়ে আপনি হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। গরিব শব্দটিকে আপনি অনেক উচ্চতায় বসাতে চেয়েছিলেন।
আপনি বুঝেছিলেন গরিব শব্দটি খারাপ এবং শ্রুতিমধুর নয়। তাই আপনি ক্রমাগত সিঁড়িভাঙ্গা অঙ্কের মত তাকে দরিদ্র, দরিদ্র থেকে নিঃস্ব, নিঃস্ব থেকে বঞ্চিত, তারপর আরো শব্দের গবেষণা চালাতে লাগলেন।
শেষ পর্যন্ত আপনি সর্বহারা শব্দটি খুঁজে পেলেন।
এরপর আপনি সাহিত্য ছেড়ে দিয়ে খুব সম্ভবত গাণিতিক বিষয়ে চলে গেলেন।
আপনি শিক্ষক ও অর্থনীতিতে স্নাতক হয়েও গরিবি ব্যাপারটা কিছুতেই ধরতে পারছিলেন না এবং বুঝতেও পারছিলেন না বোধ করি। কিন্তু আপনি তো তাদের বুঝিয়ে ছাড়বেনই, এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন।
বললেন, তোমাদের একটি রেখা দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। চক এনেছিলেন, ব্ল্যাকবোর্ড এনেছিলেন।
বোধ করি সেই ব্ল্যাকবোর্ডটি আপনি নিজেই কাঁধে করে বয়ে এনেছিলেন।
আপনি ব্যবহারিক ভাবে বোঝাতে চাইছিলেন, খুব চেষ্টা করেছিলেন। ব্ল্যাকবোর্ডে আপনি একটা সাদা রেখা টেনেছিলেন।
তাদের বলেছিলেন, এই রেখাটির অনেক নিচে তোমরা।
তারা কতটা বুঝেছিল আমি জানিনা। আপনি রেখাটি ব্ল্যাকবোর্ডের মাঝখানে অথবা ব্ল্যাকবোর্ডের কত উপরে টেনেছিলেন তা বলেন নি।
তবে আমি বুঝে গিয়েছি, ওই রেখাটি যত উপরেই থাকুক তারা ওই রেখাটির নিচে একদম মাটিতে সেঁটে গিয়েছে। তাদের আর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।
এমনিতেই তাদের পেটে দানাপানি নেই, তার উপর গরিবি বিষয়টি বুঝতে বুঝতে এতক্ষণে তারা আরো হাড় জিরজিরে হয়ে গিয়েছে।
তবে আমার একটি লাভ হয়েছে। আপনি আমাকে শিখিয়েছিলেন গরিব শব্দটিকে আরো কত রকম শব্দে ব্যবহার করা যায়।
আপনি, আমার প্রণাম নেবেন।
অনেক খোঁজে জেনেছি, আপনার নাম তারাপদ রায়!
তারাপদ রায় এসেছিলেন ১৭ নভেম্বর ১৯৩৬। চলে গিয়েছেন ১৫ আগস্ট ২০০৭।