অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন–

হালিশহর শিবের গলিতে ভাগ্নে বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলির কাছে আসতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আজ ১৬ জানুয়ারি তিনি প্রয়াত হনঃ তাঁকে স্মরণ ‌

আজ ভোরে তোমাকে খুব মনে পড়িল

অবতক, ১৬ জানুয়ারিঃ শীত কাতুরে আমি। আজ খুব ভোরে উঠি।মনে পড়িল তাহার মৃতদেহটি বিছানায় শুইয়া আছে। দেখিলাম দেওঘরের সেই কুকুরটি তাহার পায়ের কাছে বসিয়া আছে। রাজলক্ষ্মী, অন্নদা দি নিশ্চুপ। পারুলের আঁখি দুইটি বাষ্পাচ্ছন্ন। গহর তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া মাথার কাছটিতে বসিয়া রহিয়াছে।

দৃশ্যান্তর দেখিলাম, সে হালিশহর শিবের গলিতে আসিয়াছে। রাজরোষে পড়িয়াছিল পথের দাবী। তবে সব্যসাচী চরিত্রটি কার আদলে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী না রাসবিহারী বসু? সে নিরুত্তর ছিল। বলিয়াছিল, চরিত্রতে কি আসে যায়! কর্মকাণ্ডটি দেখো। মনে পড়িল, কোন বিস্মৃত অতীতে তোমারই জন্য ত প্রথম শৃঙ্খল রচিত হইয়াছিল, কারাগার ত শুধু তোমাকে মনে করিয়াই প্রথম নির্মিত হইয়াছিল। সেই ত তোমার গৌরব।

দেখিলাম ভাঙা ঘরের চালা হইতে খড়কুটো বাহির করিয়া মহেশকে খাইতে দিতেছে আমিনা। ভাত লইয়া পিতা-পুত্রীর ছলনার অভিনয়টি মনে পড়িল। ওইটুকু আমিনা কি করিয়া এত বিশাল মাপের অভিনয় করিল, আমি আজও বুঝি নাই।
জমিদারের বিরুদ্ধে গফুরের স্পর্ধার কথাও মনে পড়িল,
‘আমার খাওয়া-দাওয়া হয়নি। পরে যাব।’
লাঙলের মাথার আঘাত কি মারাত্মক নৃশংস হইতে পারে দেখিয়াছিলাম—মহেশের চোখের কোণ বাহিয়া কয়েক বিন্দু অশ্রু ও কান বাহিয়া ফোঁটা কয়েক রক্ত বাহির হইয়া পড়িল। বার দুই সমস্ত শরীরটা তাহার থরথর করিয়া কাঁপিয়া উঠিল। তারপরে সম্মুখ ও পশ্চাতের পা-দুটো তাহার যতদূর যায় প্রসারিত করিয়া মহেশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিল।’
রাত ঘন হইয়া আসিল। গফুর জোলা গ্রাম ছাড়িয়া আমিনার হাত ধরিয়া ফুলবেড়ের চটকলে কাজ করিবে বলিয়া নক্ষত্রখচিত অন্ধকারের ভিতর গ্রাম্য পথ দিয়া নিস্তব্ধতাকে আরো নীরব করিয়া হাঁটিতে লাগিল।

পরে দেখি লালু তার হাতের রক্তমাখা খড়্গটা লইয়া আসিয়া দাঁড়াইল। হাতের খাঁড়া তখন বন বন করিয়া ঘুরিতেছে। সময়টি আবার ফিরিতেছে।

শাসক- শোষণ কি সর্বদাই একই রকম থাকে? সে যেন কাহাদের হাড়িকাঠে চড়াইবার জন্য উন্মত্তভাবে গর্জন করিতেছে।

চরিত্রহীন আজ অভাগীর মায়ের মত ধুঁয়া উড়াইয়া আকাশের দিকে চলিয়া গেল।

আজ তাহাকে খুব মনে পড়িল। গফুর গহর রমেশ একাদশী আমিনা অভাগী
পার্বতীরা এক হইয়া গেল।