বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর 3রা জুন :: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির চাণক্য বলতে একটাই নাম উঠে আসে আর তা হচ্ছে মুকুল রায় । মুকুল রায় হাত ধরেই তৃণমূলে ভাঙ্গন ধরিয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয় মুকুল রায়ের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে দুই থেকে 18 হয়েছে বিজেপি সাংসদদের সংখ্যা। সেটাও সকলের জানা। বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজায়বর্গীর হাত ধরে বঙ্গ বিজেপি তে মুকুল রায়ের বাঁধন যখন শক্ত হয়ে আসছে তখন কৈলাশ বিজয় বর্গী কে রাজ্যের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তার জায়গায় আরএসএস ব্যাক গ্রাউন্ডের নেতা সঞ্জয় মেনন কে দায়িত্ব সঁপে দেয়া হয়।
বাংলার বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও আর এস এস ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক। তাই দুয়ে দুয়ে মিলে 4 হয়ে যায়। আর এক কোপে মুকুল রায়ের দিল্লি লিংক কেটে ফেলা হয়। তাছাড়া মুকুল রায়ের সঙ্গে যে সকল বিজেপির বড় নেতা সম্পর্ক বেশ ভালো তারা বিজেপিতে কোণঠাসা বা তাদের অকাল মৃত্যু ঘটে। যেমন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ মত বড় নেতারা মৃত্যুর কালে চলে যান ফলে মুকুলের দিল্লি লিংক প্রায় শেষ হয়ে যায়। এর ফায়দা তুলে নেন দিলীপ ঘোষ ও বিজেপির মুকুল বিরোধী রাজ্য নেতারা।
এতসবের পরেও যখন মুকুলবাবু কে বঙ্গ বিজেপিতে ব্রাত্য করা যায়নি তখন তাকে দুর্বল করতে বিজেপি তারি অস্ত্রকে ব্যবহার শুরু করে দেয় অর্থাৎ মুকুল রায়ের হাত ধরে যেসব দাপুটে তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগদান করেন তাদের বেছে বেছে দলে পদ দিয়ে মুকুল থেকে আলাদা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ছে।
যেমন মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায় বঙ্গ বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি পদের দাবিদার ছিলেন ।মুকুল রায় নিজেও চেয়ে ছিলেন যে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ তার ছেলে শুভ্রাংশু যেন দলের যুব নেতা হিসেবে দিক।কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা মুকুলবাবুর ছেলেকে বাদ দিয়ে মুকুল রাযের প্রিয়ভাজন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ কে এই পদে বসিয়ে দেন।
সৌমিত্র খাঁ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে মুকুল রায়ের হাত ধরে যোগদান করেন । তাকে মুকুল অনুগামী বলে বেশ ভালোভাবে চেনে বাংলার মানুষ কিন্তু এখন সৌমিত্র খাঁ কে দিয়েই মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায় কে সাইড করে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে মুকুল রায়ের হাত ধরে দলে যোগদান কারী তৃণমূল দাপুটে নেতা বিধায়ক ও মেয়র সব্যসাচী দত্ত কে দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি তে এনে কোণঠাসা করে রাখা হয় ।এবার মুকুল রায়কে রাজ্যের কোন দায়িত্ব না দিয়ে সব্যসাচীকে তার থেকে আলাদা করে দিতে রাজ্য সম্পাদক পদে বসানো হলো।
এছাড়াও মুকুলবাবু যাদের যাদের তৃণমূলের ভাঙ্গিয়ে দলে এনেছেন তাদেরকে মুকুল রায় থেকে দূরে সরিয়ে দিতে রাজনৈতিক কৌশল তৈরি করেছে বিজেপি। তবে কেন এমন কৌশল?
আসলে মুকুলবাবু বিজেপির ওপরে তার অনুগামীদের নিয়ে দলের ভালো পদ পাওয়ার জন্য চাপ বেড়াচ্ছিলেন। মুকুলবাবুর সাঙ্গ-পাঙ্গরা বাজারে খবর ছড়িয়ে দেয় যে তিনি খুব শীঘ্রই তার অনুগামী সাংসদ ও নেতাদের নিয়ে একটি নতুন দল তৈরি করতে চলেছেন । এমন অবস্থায় মুকুল রায়ের ক্ষমতা ক্ষীণ করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা তৎপর হয়ে ওঠেন। নতুন কৌশল নেন তারা। আর তাকে কোন দলের দায়িত্ব না দিয়ে তার অনুগামীদের বিজেপি রাজ্য কোর কমিটিতে জায়গা করে দেয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে মুকুল রায়কে বিজেপি, মুকুলের অস্ত্র দিয়েই কেটে ফেলতে চায়। আর তাই, তাড়াহুড়ো করে লকডাউন এর মধ্যেই নতুন রাজ্য কমিটির ঘোষণা ও তার অনুগামীদের পদাভিষেক করা হলো।
এতসবের পরেও মুকুল রায় চুপচাপ বসে থাকার লোক নন এটা সকলেরই জানা। চরম বিপদে ও অসময়েও তিনি নিত্য নতুন নতুন পথ বের করে নিয়ে রাজনীতিতে সব সময় প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকেন আর এতেই তিনি অভ্যস্ত। তাই এখন এই অবস্থাতে তিনি কোন পথ নেন তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক মহল।