কাঁচরাপাড়া একদিন আশ্রয় ও পাহারা দিয়েছিল বিপ্লবী নেতা ত্রিদিব চৌধুরীকে
অবতক ২১ ডিসেম্বরঃ থমথমে দিন। ছমছমে রাত। কালো গাড়ি আর কালো হাতে ছয়লাপ। রাজ্যজুড়ে তখন সন্ত্রাস, যে সন্ত্রাসের নামই হয়ে গিয়েছে ৭২-এর সন্ত্রাস। মানুষ বাহাত্তুরে হয়, সন্ত্রাসও বাহাত্তরে চলে আসে এই গাঙ্গেয় উপত্যকায়।
কমিউনিস্টরা তখন কংগ্রেসি কালোপাহাড়িদের দৌরাত্ম্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাঁচরাপাড়া থেকে পাণ্ডবেরা তখন বনবাসে। পার্টির কাজ চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। পার্টি মানে কমিউনিস্ট পার্টি– লড়াকু পার্টি। সেই পার্টিই যখন কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলত জনগণের কাছ থেকে আর দোকানে দোকানে গিয়ে। কাঁধে ঝান্ডাওয়ালা সেই সমস্ত মুখ আর হাতে কৌটো আর খুচরো পয়সার ঝকঝকানি শব্দ সে সব এখন নস্টালজিক।
কাঁচরাপাড়ায় তখন আর এস পি– বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল করতেন গুটিকয়েক মানুষ। মার্কসবাদ- লেনিনযবাদে বিশ্বাসী এটাও একটা কমিউনিস্ট পার্টি। এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। তিনি বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। আমৃত্যু সাংসদ ছিলেন। সাতবার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের জন্য লড়াই করে গেছেন এখনকার লোকদেখানো ইফতার পার্টির মতো নয়। একসময় বহরমপুরে ঈদের নামাজ শেষ দলবেঁধে ছুটে যেতেন অনুষ্ঠানে। পরস্পর আলিঙ্গন সেরে আসতেন।এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠেছিল বহরমপুর অঞ্চলে। থাক সে অনেক কহানি।
গাঙ্গেয় উপত্যকায় চলছে তখন শ্বেত সন্ত্রাস। ৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তিনি গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর। সঙ্গে ছিলেন কাঁচরাপাড়ার কর্মী রবীন্দ্রনাথ দত্ত। গোপনে মিটিং হবে সেখানে কর্মীদের প্রেরণা আর আড়ালে পার্টির কাজ চালানোর পরামর্শ দিতে।পার্টির কাজে তখন গুরুত্বই ছিল আলাদা। ঝৃঁকি শব্দটি কি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে?
কমিউনিস্ট পার্টি করবো আর ঝুঁকি নেবো না!
ফিরতে অনেক রাত হল। তাই রবিদার সাথে চলে এলেন সতীশ নন্দী বাই লেনে বলাই মল্লিকের ভাড়া বাড়িতে। রবিদারা তখন সেখানে থাকতেন। জায়গা কম বৌদি চলে গেলেন অন্য বাড়ি শুতে।
ত্রিদিব চৌধুরী সামান্য কিছু খেয়ে একটা চৌকিতে কোনমতে রাতটা কাটিয়ে দিলেন। পরদিন ভোরে ট্রেন ধরে চলে গেলেন কলকাতা সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত সাম্যবাদী আরএসপি দলের প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদদিব চৌধুরী।
তিনি চলে গেছেন ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৭। দুঃসময়ে তাঁকে একরাত আশ্রয় দিয়েছিল পাহারা দিয়েছিল কাঁচরাপাড়া।