অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন
কাঁচরাপাড়ায় ক্রীড়াবিদ সুভাষ ভৌমিক ও স্মৃতি ধূসর বারান্দা
মানুষ চলে গেলে কত কথা স্মৃতির উঠোনে খেলা করে। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতো সেসব ভেসে আসে শূন্যে ঝুলে থাকা মেঘের মতো।
সেটা ১৯৭৩-৭৪ সাল। নকশাল আন্দোলন প্রায় স্তিমিত। তখন ফুটবল! ফুটবল! উত্তাল হাওয়া। আমরা সদলে চলে যেতাম কলকাতার ময়দানে ফুটবল খেলা দেখতে। আমাদের এই দলের নেতৃত্ব দিতেন শংকরদা– শংকর চ্যাটার্জি। আমরা সকলেই ছিলাম ইস্টবেঙ্গল ভক্ত! ওপারের মানুষ তো! একমাত্র আশিস ঘোষ,পরে আমার ছোট ভগ্নিপতি, সে ছিল মোহনবাগান সমর্থক।
কলকাতার মাঠে খেলা প্রসঙ্গে একটু বলি। এই জনপদের অনেক ক্রীড়াবিদ কলকাতার ময়দান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এক সময়ে। আমাদের পূর্বজ পিতৃতুল্য মোনা দত্ত,অনিল গড়গড়ি-রা তো ছিলেনই, পরবর্তীতে দিলীপ মিত্র, প্রকাশ বিশ্বাস–ইস্টার্ন রেলওয়েতে খেলেছেন, দীপক দাস পুলিশে খেলেছেন, কানু মজুমদার মহামেডানে খেলেছেন, সংগ্রাম মুখার্জি গোলকিপার ইস্টবেঙ্গলে খেলেছেন।
আমি প্রথম দেখি সুভাষ ভৌমিককে তখন তিনি ইসবেঙ্গলে খেলতেন, সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলতেন। বল নিয়ে দুর্দান্ত সেই গতি। বিরোধীদল তার প্যান্টের পেছন হাত দিয়ে টেনে রেখেও তার গতিরোধ করতে পারতো না।
খেলা শেষে ফিরতি পথে পুলিশ টেন্টে ঘুগনি সহযোগে হাফ- কোয়ার্টার পাউন্ড রুটি, কোনোবার ডেকার্স লেনে চিত্তর দোকানের দু-পিস কড়া টোস্ট পাউরুটি আর ভেজিটেবল স্টু– সব হারিয়ে যাওয়া দিন!
এক্স-এলামুনি ক্লাবের আয়োজনে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচেও সুভাষ ভৌমিক খেলেছেন হাইন্ডমার্স ময়দানে।
পরবর্তীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছি যখন আমি বদলি হয়ে আসি ব্যাম্বু ভিলাতে।
আমি আর সুভাষ ভৌমিক একই বিল্ডিংয়ে অফিস করতাম। উনি ছিলেন সেন্ট্রাল এক্সাইজ বিভাগে।
তখন তার সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ ও পরিচয়। তার সঙ্গে তখন অনেকবার কথা হয়েছে!
তিনি আর আমি প্রায় সমবয়সী।
তিনি চলে গেলেন আগে,
আমি রইলাম পড়ে
কারণ তিনি তো অসমসাহসী!
বল এখন সুভাষের পায়ে
সুভাষ ভৌমিকের পায়ে বল, সে কী দৌড়
সে কী দুরন্ত স্পিড– গতি!
যে দেখেনি, তার জীবনে সে এক বিশাল ক্ষতি।
দৌড়চ্ছে সুভাষ ভৌমিক, সেন্টার ফরোয়ার্ড
তার পায়ে বল,এই পরপর দুজনকে ডজ করলেন
এগোচ্ছেন সুভাষ, এগোচ্ছেন
কী দুর্বার দুর্জয় তার পায়ের কৌশল!
একের পর এক কাটিয়ে কাটিয়ে
গোল পোস্টের কাছ নিয়ে গেছেন বল,
নেবেন দুরন্ত কিক
পরাস্ত গোলকিপার এ পর্যন্ত সঠিক।
ফুটবলার তো বটেই, এমন প্রশিক্ষক-কোচ!
হারিয়ে গেল আজ,গড়ের মাঠ থেকে
পুরোপুরি অদৃশ্য, নিখোঁজ!
সেই সুভাষ ভৌমিক খেলে গেছেন
দাপিয়ে গেছেন হাইন্ডমার্স ময়দান।
আজকের দিনে মাথা নত করি
তাকে জানাই সম্মান।
ভোম্বলদা, তোমায় মাঠে আর দেখবো না।
তোমায় আমরা ভুলছি না, ভুলবো না!
ভোম্বল দা শুনছো! ভেসে আসছে তোমার কন্ঠ—
সেই উত্তাল কলরোল
গো ও ও ও ও ল…..