অবতক খবর,৭ এপ্রিল,মলয় দে,নদীয়া:-“রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে।”
শুধু কবির ভাবনাতেই নয় বাস্তবেও যে গাছ দুঃখহারী সে হল অশোক গাছ। অশোক, অপশোক, অঞ্জনপ্রিয়া, কঙ্গেলি, কর্ণপূরক, কেলিক, চিত্র, দোষহারী, নট, পল্লবদ্রুপ, পিণ্ডিপুষ্প, প্রপল্লব, বঞ্জুলদ্রুম, বিচিত্র, বিশোক, মধুপষ্প, রক্তপল্লবক, রাগীতরু, রামাবামাঙ্ঘিধাতক, শোকনাশ, সুভগ, স্মরাধিবাস, হেমপুষ্প নানান নামে পরিচিত অশোক চীন, ভারতবর্ষ, শ্রীলঙ্কা অঞ্চলের স্থানীয় বৃক্ষ বিশেষ। আমাদের এই দেশী বৃক্ষটির খ্যাতি সুপ্রাচীন। কাব্যে বহুল ব্যবহার ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে অশোক যুক্ত। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে – গৌরী দেবী এই বৃক্ষের নিচে তপস্যা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং শোক থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। সেই কারণে এই বৃক্ষের নাম অশোক হয়েছে।
এই গাছ ভারতবর্ষ ও শ্রীলঙ্কাতে প্রচুর পাওয়া যায়। কথিত আছে গৌতম বুদ্ধ লুম্বিনি-তে এই গাছের নিচে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং মহাবীর এই গাছের নিচে ধ্যান করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। রামায়ণে উল্লেখ আছে– রাম সীতাকে অপহরণ করে অশোকবনে রেখেছিলেন। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এ ফুল অত্যন্ত পবিত্র। শোক নাশ করে বলেই এর নাম অশোক। চৈত্র মাসের শুক্লাষষ্ঠীতে মায়েরা সন্তানের কল্যাণ কামনা করে অশোক ফুল দিয়ে পূজা করেন, একে অশোকষষ্ঠী বলে। এছাড়া চৈত্রের শুক্লাঅষ্টমীতে পালিত হয় অশোকাষ্টমী। অশোক ভারতের নিজস্ব বৃক্ষ হলেও বর্তঅমানে সচরাচর দেখা যায় না সেই অর্থে গাছটি কিছুটা দুর্লভ।
অশোক মাঝারি আকৃতির ছায়াসুনিবিড় চিরহরিত্ বৃক্ষ। পূর্ণবয়স্ক গাছ পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিটার উঁচু হয়। পাতা যৌগিক। একটি পাতায় দশটি পত্রক থাকে।গাঢ় সবুজ পাতাগুলো দীর্ঘ, চওড়া ও বর্শাফলাকৃতির।
অশোক ফুল প্রেমের প্রতীক। কামদেবের পঞ্চশরের অন্যতম শর এই ফুলে সজ্জিত। রবীন্দ্রনাথ আপন মানুষ এলে সুন্দরের যে শুভ সূচনা হয় তা তুলে ধরেছেন এভাবে-
“আসত তারা কুঞ্জবনে চৈত্র জ্যোৎস্নারাতে
অশোক শাখা উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে।”
ফুল মূলত বসন্তকালে ফুটলেও হেমন্ত অবধি প্রস্ফুটন প্রাচুর্য চোখে পড়ে। ফুল ছোট, কিন্তু বহুপৌষ্পিক, ছত্রাকৃতি মঞ্জরি আকারে বড়। অজস্র ফুলে ভরা এই গাছ বছরে এ সময় পরপর তিন চার বার ফুল দেয়। তাজা ফুলের রঙ কমলা, কিন্তু বাসি ফুল লাল। রবীন্দ্রনাথ অশোকের মনোরম রঙটুকু নিজের মনে ধারণ করেছেন এমন করে-
“তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে”
ফুল গাছের কান্ড থেকেও ফোটে। ফুলের আকৃতি ক্ষুদ্র, মৃদু গন্ধযুক্ত। ফুলগুলির গড় লম্বা ২.৫ সেন্টিমিটার। পরাগকেশর দীর্ঘ, উক্ষিপ্ত এবং পরাগকোষ গাঢ় লাল। মঞ্জরি পিঁপড়ার প্রিয় আবাস।
অশোকের ঔষধি গুণ অনেক।এর বাকলে ট্যানিন, ক্যাটেকোহল, স্টেরল এবং বিবিধ ধরনের ক্যালসিয়াম যৌগ পাওয়া যায়। বিবিধ স্ত্রীরোগ, রক্তক্ষরণ এবং আমাশয়ে এর ছালের রস কার্যকর। শুকনো ফুল রক্ত আমাশয়ে এবং বীজ মূত্রনালির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কাঠ নরম ও মূল্যহীন।