বিশ্ব গণ্ডার দিবস
গণ্ডার বিষয়ে যতটুকু আমি জানি
অবতক খবর,২২ সেপ্টেম্বরঃ অনেকেই বলেন, আমার বন্ধু দাদারা তো বটেই, বলেন, তোর গণ্ডারের চামড়া। বলেন এই কারণে আমার লজ্জা নেই বলে। আমি বলেছি, এটা তোমরা ভুল বলো। আমি বেহায়া নির্লজ্জ খিস্ত খেউর খাওয়া মানুষ হতে পারি। কিন্তু তাই বলে শুধুমুধু তোমরা গণ্ডারকে অপমান কর কেন? গণ্ডার কিছুতেই নির্লজ্জ নয়,তার লজ্জা বোধ আছে। তার সারা দেহ উদোম থাকলেও প্রজনন অঙ্গ লুকানো থাকে।
তবে এটা ঠিক গণ্ডারের চামড়া অত্যন্ত পুরু ও শক্ত হওয়ার কারণে সে যে কোনো আঘাত প্রতিহত করতে পারে। এই অর্থে আমার চামড়াও শক্ত এবং পুরু। আমাকে শতশত গালি দেওয়া সত্ত্বেও আমি অটল থাকি। আমার মোটা চামড়া কে আমি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করি।
জানো তো গণ্ডার অতিশয় নিরীহ তৃণভোজী ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানে ঘাস খায় ও মাতৃ স্তন্যপান করে। ঠিক আমার মতো। আমি তো মাতৃ স্তন্যপান করেই মানুষ অথবা অমানুষ হয়েছি। আর শোনো, আমার স্তন্যদায়িনী মায়ের মত গণ্ডারণীরও দুটি স্তন রয়েছে। বাবা বলেছিলেন, তোর আর বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না। তুই কি ঘাস খাস? আমি ওই গন্ডার বা রাইনো শ্রেণীর মধ্যেই পড়ি।
গণ্ডারের কদাকার দেহের গঠন, ভাঁজওয়ালা শক্ত পুরু চামড়া এবং শৃঙ্গ দেখে ভয়ানক মনে হলেও সে অত্যন্ত নিরীহ। ওই আমার মতো। গণ্ডারের শৃঙ্গ ষকে আমরা সাধারণত খড়্গ বলে থাকি। আরো শোনো গণ্ডারের ওই চামড়া কিন্তু ঢাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বলে আমি পরে পড়াশুনা করে জেনেছি।
গণ্ডারদের প্রেম নিবেদনে ঝামেলা আছে। একটি গণ্ডারণীকে পেতে হলে গণ্ডারদের মধ্যে লড়াই বেঁধে যায়। যে জয়ী হয় তার সঙ্গেই গণ্ডারণী দীর্ঘসময় প্রেম নিবেদন করার পরে রমণে লিপ্ত হয়। গণ্ডারণী সাধারণত একটি শাবক প্রসব করলেও কোন কোন ক্ষেত্রে যমজ জাতকও সে গর্ভে ধারণ করে। এটা উল্লেখ করলাম কারণ আমাদেরও তো এমনই স্বভাব।
গণ্ডারের ওই শৃঙ্গ যা ভয়ানক এবং আত্মরক্ষার অস্ত্র, তা কিন্তু গণ্ডারের চুলের পরিবর্তিত রূপ।
আর শৃঙ্গের কোন ঔষধি গুণ নেই। তা যৌন পরিবর্ধকও নয়।
মানুষ তো কতরকম! সে তো শিবের বাপেরও জানা অসাধ্যি। গণ্ডার পাঁচ প্রকার। ভারতীয় গণ্ডার, জাভাদেশীয় গণ্ডার, সুমাত্রার গণ্ডার, কালো ও সাদা গন্ডার। তাদের জলদাপাড়ায় ও আসামের কাজিরাঙ্গায় এক শৃঙ্গ গণ্ডার পাওয়া যায়।
শৃঙ্গের প্রলোভনে গণ্ডারের ব্যাপক চোরা-শিকার হয়। শৃঙ্গ যে মূল্যবান নয় তা জানান দেবার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে গণ্ডার দিবসে অসম সরকার সরকারি ট্রেজারিতে সংরক্ষিত চোরাই ২৫০০ গণ্ডারের শৃঙ্গ ছটি লৌহচিতায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ড্রোণের মাধ্যমে এই অগ্নিসংযোগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বকর্মাও হাত লাগিয়েছিলেন।
এটা তো সকলেই জানে, মারিত গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার। প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যটি বাংলায় প্রমাণিত। বাংলায় ভাণ্ডার লুট তো চলছেই, গণ্ডারও বিলুপ্ত হতে চলেছে, যেমন আমি!
একটা বিশেষ কথা বলে রাখি, ‘রোজ ডে’ ছাড়া গণ্ডারের একাকী ঘুরে বেড়ানো স্বভাব। অন্য সময়ে দুটি গণ্ডারকে কখনোই একসঙ্গে দেখতে পাবেন না।
গাণ্ডিবধন্বা কাকে বলে জানেন তো? এটা হওয়া আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল!