আনপড়ের আত্মচিৎকার
তমাল সাহা
দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল বিস্তৃত মহাসাগরের দিকে চোখ রাখি
উত্তর প্রান্তিকে চোখ রাখি ধূম্র উত্তুঙ্গ হিমালয়ের দিকে
পূর্বে যে সূর্যোদয় হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলে
সেই জবাকুসুমসঙ্কাশে অগ্নিবলয়টি সমুদ্রজাত লবনাক্ত হাওয়া শরীরে মেখে ক্রমাগত উপরের দিকে উঠতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমঘাট পর্বতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অস্তমিত পথে চলে যায়।
ততক্ষণে ডানায় রোদের গন্ধ মুছে ফেলে ভারতীয় বিশাল সাম্রাজ্য,
তার মাথার উপর নেমে আসে অন্ধকার।
সেই গাঢ়তর অন্ধকার ক্রমাগত ঘন হতে হতে ভারতের পার্লামেন্টের সদর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর হঠাৎ ঢুকে পড়ে গণেশ চতুর্থীর দিন সাড়ম্বরে উদ্বোধিত সংসদ ভবনের অন্তঃপুরে।
গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে যুগপৎ যূপকাষ্ঠে রেখে কে বা কারা হিংস্র চিৎকারের করাতে ফালা ফালা করে—
বাহার ফেকো ইস মোল্লে কো!
আইন প্রণয়নের লোকসভায় দাঁড়িয়ে মানবতাকে এভাবে অপমান করা যায়?
কাটুয়া মোল্লা উগ্রবাদী– এইসব অসংসদীয় শব্দ উচ্চারণ করা যায় মহাভারত নন্দিত ভারত তীর্থের এই উপমহাদেশে?
ঘৃণা ক্রোধ ক্রূরতা হিংসার এই উগ্রতা নিয়ে কলঙ্কিত ভারতীয় সভ্যতা কতদূর যেতে পারে?
আন্তর্জাতিক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এই বেলাগাম শব্দসমূহ, তাতে কি ভারতবর্ষ মান-সম্মান খোয়া যায়?
মনুসংহিতা সে তো এক বিশাল ভারী পাঠক্রম, তা পাঠ করে এ কেমন তোমার ঋদ্ধ চেতনা?
আশ্চর্য! এই মহা-অমৃত কালে সুরক্ষা বিলের কলস থেকে গড়িয়ে পড়ে অজস্র গরল, অতি দ্রুত হিংসার বীজ মাথা উঁচিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে…
ঈশ্বরের বরপুত্র আমি, দুনিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্রের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আমি, জনগণমন অধিনায়ক ভাগ্যবিধাতার এই দেশে আমিই শাহেনশাহ!
আমিই আলমগীর! কে রুখতে পারে আমাকে?
আর এই নির্বোধ আনপড় আমি?
এই মহানরকশালায় গণতান্ত্রিক চিতা সাজানো বিশাল প্রান্তরে এক ‘ভারওয়া’ কবি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
মানবতার ধংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে শব্দহীন চিৎকারে আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ভারতবর্ষের বুকে হাঁটিতেছি…