লোকটি মানুষের কথা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে জানতো। কোন্ কথা নীরব, কোন্ কথা সরব উচ্চারণে বলতে হয় তা সে বলতে জানতো। বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাঁর কথা। লোকটির নাম প্রভাস বন্দ্যোপাধ্যায়, আবৃত্তিকার বা বাচিকশিল্পী। হালিশহরের ভূমিপুত্র। তাঁর স্মরণ সভা হয়ে গেছে গতকাল ১৬ জুন কাঁসারিপাড়ায়, সেই উদ্যানে স্থাপিত ছিল বিপ্লবী বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর আবক্ষ মূর্তি

আবৃত্তিকার
তমাল সাহা

উঁচুগোছের মানুষ কাকে বলে আমি তার কতটুকু জানি!
এই সাধারণ লোকটি উঁচুগোছের কিছু ছিল কি, আমার সন্দেহ বেড়ে যায় যা।

লোকটির পাড়ার মধ্যে বসত ছিল
সাদামাটা পোশাক ছিল
সাধারণে আলাপ ছিল
বিনম্র স্বভাব ছিল
মানবজমিন আবাদের হয়তো কিছু গন্ধ পেয়েছিল।

মরে গেলে সাধারণ মানুষের তো প্রকাশ্যে স্মরণসভা—
স্মৃতিচারণ তর্পণ তেমনভাবে হয় না
এখন বুঝি লোকটি অন্য মাপের মানুষ ছিল!

ভেবে দেখি
লোকটি খুবই সাদাসিধে ছিল মানুষ বুনিয়াদ তৈরির কাজ করতো।
বর্ণমালা তো সব ভাষাতেই আছে
শব্দকে কি করে কথা বলাতে হয়
কিভাবে উচ্চারণ করতে হয়
তার বীজ বুনে দেবার একটা কথা-বলার কারখানা খুলেছিল
সেই কারখানায় শিশু কিশোর এমন কি বড়রাও কাজ শিখতে আসতো
তার মানে লোকটি শব্দকে কথাশিল্প বানাতো।

শব্দকে কন্ঠের আধারে আবৃত্তায়ন করিয়ে শ্রোতাদের কর্ণে অনুরণ সৃজন করতো যাকে বলে আবৃত্তি।
লোকটি আবৃত্তিকার ছিল
তোমরা এখন যাকে বাচিক শিল্পী বলো।

লোকটি চলে গেল—
লোকটি এবার মানুষ হয়ে আকাশের দিকে হেঁটে গেল…

কথাশিল্পটা রয়ে গেল!