অবতক খবর,২৬ সেপ্টেম্বর: ১) “জাস্টিস ফর আর জি কর” আজ শুধু আর জি কর মেডিকাল কলেজ বা শুধু জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নয়, এ’আন্দোলন বাস্তবিকভাবেই এক সার্বিক গণ-নাগরিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতের প্রশ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে হাজার হাজার জুনিয়র ডাক্তাররা, যারা আন্দোলনটাকে জিইয়ে রেখেছে; যে সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের অনুপস্থিতিতে দেড় মাস হাসপাতালগুলোকে সচল রাখলেন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে; শহরে গ্রামে মফস্ফলে যে সাধারণ মেয়েরা রাত দখল করলেন, যে বিপুল সংখ্যক সাধারন মানুষ আন্দোলনের প্রতিটি মূহুর্তে পাশে এসে দাঁড়ালেন, আমাদের সাথে অগুন্তি রাত জাগলেন, রাস্তায় মানবশৃঙ্খল গড়লেন, রাজপথ ভরিয়ে তুললেন শ্লোগান-গান-ছবিতে; শাসকের রক্তচোখ উপেক্ষা করে যারা গ্রামে মফস্বলে রুখে দাঁড়ালেন, রুখে দাঁড়াচ্ছেন ভয়ের রাজনীতির উল্টোদিকে; যে গৃহপরিচারিকা দিদিরা রিক্সাচালকেরা রাস্তায় নামছেন আমাদের দাবীগুলোকে সামনে রেখে, যে ডেলিভারি রাইডাররা ইন্সেন্টিভের মায়া কাটিয়ে, কাজ চলে যাওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়েও রাজপথে নেমেছেন, নিজেরা মিছিল করেছেন, দিনভর ডেস্কজবের পরেও যে আমাদের বয়েসি আইটি শ্রমিকরা প্রায় প্রতিদিন লড়েছেন মিছিলে, অবস্থানে, গলা মিলিয়েছেন আমাদের গানে-স্লোগানে; যে অগুন্তি অজানা মানুষেরা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে একা গলির মুখে মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়েছেন, একডাকে নিজের সর্বস্ব নিয়ে যারা ছুটে এসেছেন দিনরাত এক করে, শুধু আমরা ধর্নায় অবস্থানে বা মিছিলে ডেকেছি বলে, তাদের প্রত্যেকের ভূমিকা ছাড়া আজ অভয়ার বিচারের দাবীতে আমাদের আন্দোলনটা দানা বাঁধতেই পারতো না। এ’আন্দোলনটা বাংলার প্রতিটা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সাধারন মানুষের তিল তিল অবদান ছাড়া আজ একচুল এগোতো বলে আমরা মনে করিনা।
২) আমরা জানতে পারলাম, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির দিন আবারও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচার পেতে এই দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের হতাশ করছে। আমরা প্রথম দিন থেকে বারংবার বলেছি ‘Justice delayed is justice denied’। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত, দ্রুত বিচার। এখানে একটা কথা উল্লেখ করা জরুরী। এই আন্দোলনটা আমাদের সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আইন থেকে শুরু করে মন্ত্রীসভা, পুলিশ থেকে শুরু করে আমলা, গোটা সিস্টেমটার ভেতরে কতটা ঘুণ ধরেছে। ৯ আগস্ট থেকে শুরু করে আজ অবধি আন্দোলন তীব্র না হওয়া অবধি সিবিআই একজনকেও অ্যারেস্ট করেনি, একজনও প্রমান লোপাটে, দুর্নীতিতে, ভয়ের রাজনীতিতে অভিযুক্ত-দোষী পুলিশকর্তা, আমলা বা শাসকদলের নেতাদের গায়ে আঁচড়টুকুও পড়েনি। ভাবলে সত্যিই শিউরে উঠতে হয়, আমরা তো না’হয় ‘সম্মানীয়’ ডাক্তার, একটা নৃশংস ঘটনার বিচার পেতে যদি আমাদেরই এতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়, রাতের পর রাত ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তায় কাটাতে হয়, তারপরেও জোটে “তারিখ পে তারিখ”, সেখানে আপাত সাধারণ মেয়েরা, মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত-খেটে খাওয়া মানুষ তাদের সাথে ঘটে চলা অন্যায় অবিচারের সুরাহা খুঁজতে কোথায় যাবেন, কোন দেওয়ালে মাথা ঠুকবেন!! সম্প্রতি টলিউডের একজন হেয়ার ড্রেসার গিল্ডের সিন্ডিকেট-রাজের চোখ রাঙানিতে কাজ হারিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এস এস কে এম হাসপাতালে আমরা তার চিকিৎসা করতে গিয়ে জানতে পারছি গিল্ড-রাজের ভয়াবহ সব গল্প। তবুও এই বিদ্রোহী কন্ঠস্বর শ্রোতা পাবে কিনা, কিভাবে ন্যায় পাবে আমরা জানি না। সেই জন্যেই অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবি যাতে সঠিক পরিনতি পায় তার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা আবারও দাবী তুলছি, সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে দোষীদের গ্রেফতার করে সুবিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে।
৩) আমাদের সব্বার আন্দোলনটা কিন্তু শেষ হয়নি, অভয়ার বিচার ছিনিয়ে নিতে না পারা অবধি এ আন্দোলনের শেষ নেই, এ’আন্দোলনের শেষ নেই যতদিন পর্যন্ত না আর একটাও অভয়ার মত ঘটনা না ঘটে, তাকে সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে ততদিন। এযাবৎ আন্দোলনে কিছু পথ আমরা এগোতে পেরেছি এ’কথা সত্যি; আমাদের আন্দোলনের চাপেই সিবিআই অ্যারেস্ট করেছে সন্দীপ ঘোষ, অভিজিত মন্ডলদের, প্রমাণ লোপাটের যে অভিযোগ আমরা প্রথম দিন থেকে করছিলাম, আদালত আর সিবিআই সে অভিযোগে শিলমোহর দিতে একপ্রকার বাধ্যই হয়েছে বলা চলে। আন্দোলনের চাপেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বাধ্য করেছি পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, ডিএমই, ডিএইচএস দের তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে। প্রাথমিকভাবে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ও রোগীস্বার্থে হাসপাতালগুলির কাঠামোগত বদলের বেশ কিছু লিখিত
প্রতিশ্রুতিও আমরা আদায় করতে পেরেছি সরকারের কাছ থেকে। আন্দোলনের চাপেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভয়ের রাজনীতি চালানো ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ এর মাথাদের ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি মেডিকাল কলেজ থেকে এই সিন্ডিকেটের মাথাদের বের করে দেওয়ার সাহস দেখাতে পেরেছে অগণিত মেডিকাল ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এই প্রতিটি জয় আদতে আংশিক, প্রাথমিক জয় মাত্র, এ’কথা আমরা কেউ ভুলছি না। তাই আংশিকভাবে কাজে ফিরলেও আন্দোলন থেকে পিছু হটছি না আমরা।
৪) অভয়ার বিচার, দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই এ’ ছিল আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবী। অভয়ার মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভয়ের রাজনীতিকে নির্মূল না করতে পারলে, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সার্বিক অসহযোগ ঘোষণা না করে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোখা যায় না, যাবেনা। আমরা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, কীভাবে সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভয়ের রাজনীতি কায়েম করে রাখে শাসকদলগুলো। নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করার জন্য যেকোনো রকম গণতান্ত্রিক পরিসরের টুটি চেপে এক সার্বিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার এই ইতিহাস বাংলা দেখছে বিগত কয়েক দশক ধরেই। দুঃখের বিষয় পশ্চিমবঙ্গ এই প্রশ্নে ব্যাতিক্রম নয়। বরং এ রাজ্যের বাইরেও অন্যান্য রাজ্যেও চলছে একই ধরণের কার্যকলাপ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রাজ্যের থেকেও তার সংখ্যা বা মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। আরজি কর বা রাজ্যের অন্যান্য মেডিকাল কলেজ, রাজ্যের সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেও সেই বন্দোবস্তই জারী ছিল। এই যে অভয়ার সাথে ঘটা নৃশংস ঘটনা, আর তাকে ধামাচাপা দিয়ে তদন্ত ও বিচারকে বিপথে চালিত করার অপচেষ্টা দেখলাম আমরা, যারা এ’ঘটনাকে যেন তেন প্রকারেণ “ম্যানেজ করার’ চেষ্টা চালালো, তারা কারা ছিল? স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যারা এতদিন ভয়ের রাজনীতি চালিয়েছে, শাসকদলের ধামাধরা সেই গোষ্ঠীটিই যে এর পেছনে ছিল, আর তার সাথে অঙ্গাঙ্গী যোগ ছিল আমলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের, এ কথা আজকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়েছে, আন্দোলন এ’কাজ করতে পেরেছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, এই ব্যাধিটি সর্বব্যাপী। রাজ্যের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে পুরসভা-পঞ্চায়েত, ক্লাব থেকে শুরু করে আবাসন কমিটি, সর্বত্র এই ভয়ের রাজনীতি, গণতন্ত্রের টুটি চিপে ধরা বহাল তবিয়তে বর্তমান। আর জি করের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায়, সার্বিক জনজীবনে এই ভয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে যদি সামগ্রিক ভাবে রুখে দাঁড়ানো না যায়, যদি সার্বিক গণতন্ত্রের জন্য নাগরিক সমাজ আজ রুখে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে একজন অভয়ার বিচার হয়তো আমরা ছিনিয়ে আনতে পারবো, কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোখা যাবে না। আমরা আগেই বলেছি ভয়ের রাজনীতির প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ কোনো বিশেষ ব্যাতিক্রম নয়, এ দেশের সর্ব স্তরেই ভয়ের রাজনীতি ক্রমবর্ধমান প্রভাব আমরা বিগত পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু যে বাংলা এদেশে নবজাগরণের জন্মদাত্রী, যে বাংলা স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক, যে বাংলা সুভাষ বসু-রবীন্দ্রনাথ-বিদ্যাসাগর-বেগম রোকেয়া-কাদম্বিনী গাঙ্গুলী-প্রীতিলতার বাংলা সেই বাংলা রাজ্য জুড়ে তথা দেশজুড়ে বাড়তে থাকা ভয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধেও পথ দেখাবে বলে আমরা স্বপ্ন দেখি।
আমরা, জুনিয়র ডাক্তাররা নাগরিক সমাজের কাছে আবেদনই করবো, অভয়ার বিচারকে সুনিশ্চিত করতে, অভয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সর্বত্র এই ভয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নাগরিক অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রকে সত্যি অর্থে সমাজ জুড়ে পুন;প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের লড়াই জারী থাকবে। এর সাথে সাথে এ’কথাও মনে রাখা দরকারি, সমাজের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পিতৃতন্ত্র ও ধর্ষণের সংস্কৃতি বিরাজমান; এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সামগ্রিক লড়াই ব্যতিরেকেও অভয়ার পুনরাবৃত্তি রোখা অসম্ভব।
আমরা আজ আন্দোলন দিয়ে কিছু জিনিস ছিনিয়ে আনতে পেরেছি। মেডিকাল কলেজগুলিতে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধী আইন অনুযায়ী আইসিসি তৈরীর ডিরেক্টিভ আদায় করা গেছে সরকারের কাছ থেকে। একদিকে সেগুলোকে লাগু করা ও কার্যকরী করার জন্য আমরা জুনিয়র ডাক্তাররা মেডিকাল কলেজগুলোতে লড়াই চালিয়ে যাব, কিন্তু সার্বিক ভাবে স্থানীয় স্তরে, গ্রামে মফস্বলে শহরেও যৌন হেনস্থা, ধর্ষন সংস্কৃতির প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নাগরিক সমাজকে সোচ্চারে আন্দোলন গড়তে হবে।
রোগীস্বার্থে, একটা উন্নত জনমুখী সরকারী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য যে দাবীগুলো আমরা আদায় করে আনতে পেরেছি সরকারের কাছ থেকে (কেন্দ্রীয় রেফারাল ব্যবস্থা, প্রতিটি হাসপাতালে ডিজিটাল বেড ভ্যাকান্সি মনিটর, প্রত্যেক হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যাতে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, প্রতিটি হাসপাতালে গ্রিভ্যান্স সেল), সেগুলিকে লাগু করার জন্য প্রয়োজন ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ও নাগরিকসমাজের সম্মিলিত নজরদারি ও লাগাতার আন্দোলনের, এ’কথাও আমরা মনে করিয়ে দিতে চাইবো।
মুখ্যসচিবের সাথে আমাদের শেষ মিটিং এর পরে আমাদের ৪ নং দাবীসহ যে লিখিত ডিরেক্টিভ আমরা আদায় করেছিলাম, দু একটি বিচ্ছিন্নউদাহরণ ছাড়া সেগুলিকে প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিকাল কলেজ স্তরে লাগু করার প্রক্রিয়া কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। আমরা রাজ্যসরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, সরকার যদি রোগী পরিষেবা ও ডাক্তার- স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার প্রশ্নটিতে এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলে, আমরাও কিন্তু আন্দোলনকে তীব্রতর করতে বাধ্য হবো। উপরন্তু আমাদের ৫ নং দাবীরও অধিকাংশই পূর্ণ হয়নি, মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া বাস্তবত সরকারের দিক থেকে কোনো পদক্ষেপ আমরা এখনো দেখতে পাইনি। এই বিষয়গুলিকে নিয়ে আমরা সরকারের সাথে দ্রুত আলোচনাতে বসতে চাই, আমরা চাই সরকার আমাদের অপূর্ণ দাবীগুলিকে মান্যতা দিয়ে সেগুলিকে পূরণ করুক, যে দাবীগুলি মানা হয়েছে সেগুলিকে সর্বস্তরে লাগু করার জন্য অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক।
৫) আমরা খবর পেয়েছি, আন্দোলনের সংহতিতে যারা বিভিন্ন জায়গাতে রাত দখল করেছেন, প্রতিবাদী কর্মসূচী নিয়েছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে এই প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপগুলি বন্ধ করতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা মানুষের আন্দোলন কিন্তু তীব্রতর হবে।
৬) বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি রাজ্যের ক্ষমতাদখলের ক্ষুদ্র স্বার্থে আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছে গোড়া থেকেই। আমরা একটা কথা বারবার স্পষ্ট করে জানিয়েছি, হাথরাস-কাঠয়া-উন্নাওতে যারা ধর্ষকদের মালা পরিয়েছে, তাদের ক্ষমতা দখলের খেলার চক্করে আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে আমরা দেবোনা, জনগণ দেবেনা। এদেরই কিছু জন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত পরশু দিন রাজ্যপালের সাথে দেখা করে এবং মহালয়ার দিন জুনিয়র ডাক্তাররা অভয়ার জন্য তর্পণ করবেন, এই ভুয়ো খবর মিডিয়াতে ছড়ানোর অপচেষ্টা করে। এই কর্মসূচীর সাথে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই আন্দোলন বিভাজনকামী যে কোনো রাজনীতিকে প্রথম দিন থেকেপ্রত্যাখ্যান করেছে, আগামীতেও করবে।
৭) দক্ষিণবঙ্গের সাম্পতিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষেরদুর্দশা আমাদের বিচলিত করেছে। বাংলার সাধারণ মানুষ আমাদের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন একদম প্রথম দিন থেকে; আমরা, জুনিয়র ডাক্তাররাও মানুষের দুঃসময়ে সাধ্যমত তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। এ’ও আমাদের চলমান আন্দোলনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলেই আমাদের মনে হয়েছে। পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় প্রবল বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষকে যে ভয়ংকর দুর্গতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তা কিছুটা লাঘব করতে জল, শুকনো খাবার, জামাকাপড় ও অত্যাবশ্যক ত্রাণসামগ্রী, ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা ছুঁটে গেছিলাম কোথাও নৌকায়, কোথাও হাঁটুজল পেরিয়ে। অভয়া বন্যা রিলিফ ক্যাম্প ও অভয়া হেলথ ক্লিনিক সহ আমরা পৌঁছাতে পেরেছি কেশপুর, গজা গ্রাম; (উদয়নরায়ণপুর), গড়পুরুষোত্তমপুর (পাঁশকুড়া), রাধানগর (হুগলি), পাতুল গ্রাম, ধামলা, সারদা (খানাকুল), বড় দিগরুই (পুরসুরা), ডেবরা (পশ্চিম মেদিনীপুর), ভূতনী (মালদা), মহারাজপুর, নাড়াজোল (ঘাটাল) এর মত বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে, আমাদের প্রতিনিধিরা পাঁশকুড়াতে দু’দিনব্যাপী অভয়া ক্লিনিক ও রিলিফ এর কাজ করছেন। আগামী দিনগুলোতেও বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে আমরা ত্রাণ ও চিকিৎসার কাজ চালিয়ে যাবো। বাংলার বন্যা কবলিত মানুষের কাছে এ আমাদের প্রাথমিক দায়বদ্ধতা।
৮) অভয়ার বিচারের দাবীতে, আর একটিও অভয়া যাতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাজ্যের প্রতিটি মেডিকাল কলেজ তথা সামগ্রিক জনজীবনে ভয়ের রাজনীতিকে নির্মূল করতে আমরা, WBJDF আমাদের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই দাবীগুলিকে সামনে রেখে আগামী ২৭ শে সেপ্টেম্বর একটি গণকনভেনশনের আয়োজন করতে চলেছি। গতকাল মেয়রের কাছ থেকে ধনধান্য সভাগৃহে এই সভা করার অনুমতি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ কোন এক অজ্ঞাত কারণে তারা আমাদের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন তার সাথে একাধিক বড় সভাগৃহ আমাদের সভা করতে দিতে অস্বীকার করেছেন। তাদের বক্তব্য, “তোমাদের প্রতিবাদ তো শেষ হয়ে গেছে। এখনও কেনো তোমরা এসব যুক্তিহীন কর্মসূচি করছো?” আমরা সরকারকে সোজাসুজি জানিয়ে দিতে চাই, অভয়ার ন্যায়বিচার না নিয়ে আমাদের আন্দোলন শেষ হবেনা। আর এরকম জঘন্য ষড়যন্ত্র চললে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনকে আরও তীব্র আকার দেবে।
আমরা আপনাদের কাছে উক্ত কনভেনশনকে সফল করার আবেদন করবো, আমরা SSKM হাসপাতালের
অডিটোরিয়ামে বিকেল চারটে থেকে এই গণকনভেনশন করব। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী আমরা গণ কনভেনশন থেকেঘোষনা করবো। বিচার না পাওয়া অবধি আমাদের আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে তীব্রতর হবে।