আমার নজরুল
তমাল সাহা
যখন অযোধ্যায় রাম মন্দির আর বেনারসে জ্ঞানবাপী দেখি তখন নজরুলের মুখ আমার চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়!
আমি নজরুলের বিভিন্ন বিভঙ্গ দেখেছি। বিদ্রোহী চেতনায় আবিষ্ট তার অবয়ব, তার ধ্যানতন্ময় মুখ,তার হাবিলদারি চেহারা, জেলখানায় ডোরাকাটা দাগের কয়েদি জামা তার সঙ্গে খাপ খাওয়া উজ্জ্বল মুখ, অনশনক্লিষ্ট মুখ,মূক হয়ে যাওয়ার সেই বিনম্রতা আমি দেখেছি আর ভাবি মানুষটি এত অল্প সময়ে এত বিচিত্র সব কথা লিখে গেল কী করে!
নজরুল নামের সঙ্গে জুড়ে আছে ইসলাম অথচ দেখেছি সেতো নয় আল্লাহর গোলাম!
আমি দেখি তার যাপিত জীবনের ছবি। তার গেরস্থালি জীবনের নারীদের– আশালতা সেনগুপ্তা প্রমীলা দেবীকে আর নার্গিস আসরি খানম-কে।
আমি দেখি অপরিচিত এক ইসলাম নজরুলকে। জাতকদের নাম মনে পড়ে আমার– কৃষ্ণ মুহাম্মাদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ।
এসব কি করেছে নজরুল?
জীবনচর্চায়ও ধর্মীয় সংহতির মালা গাঁথতে চেয়েছে! আমাদের ভেঙেছে কি ভুল?
অনুবাদ করেছে ইন্টারনেশানাল। সে এক হাতে লিখেছে হামদ ও নাত অন্যহাতে লিখেছে শ্যামাসঙ্গীত।
সে ভাঙছে মন্দির-মসজিদ।
খোদার আরশ আসন ছেদ করছে, ভগবানের বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে দ্বিধা করছে না।
সে এসে দাঁড়াচ্ছে কুলি মজুরের পাশে। গড়ছে বঙ্গীয় মজুর কৃষক দল। ঘোষণা করছে নিজেকে সাম্যবাদী কমিউনিস্ট!
আমাদের রবীন্দ্রনাথ বলে ওঠে,ওরে ধুমকেতু, কি করিস রে হায়! ভেঙে ফেল তোর অনশন। আমার কাছে আয়!
বাংলা সাহিত্য যে তোকে চায়!
কবিরা সব পারে!
ওরে আমার লেটো গানের দুখু মিঞা!
আমার তো এই গোধুলিবেলার জীবন
এখন শিখি নজরুল মানে নিদর্শন!