আমার মা ও রক্ষাকবচ
তমাল সাহা
আমার মা তেমন তো বড় লেখাপড়া করেনি।ভাগ্যিস আমার মাস্টারমশাই বাবার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিমল!
তাই অন্ততপক্ষে বই পড়া কাগজ পড়া আর তোমাদের ওই রামায়ণ মহাভারত গীতা পড়া শিখেছিল।
আমাদের বাড়িতে তখন যুগান্তর পত্রিকা রাখা হতো। মা দিব্যি পড়তে পারতো। মানে আমি বলছি, আমার মার এই খবর টবর সম্বন্ধে জানার একটু আগ্রহ ছিল।
বোধ করি এখন যদি মা বেঁচে থাকতো, তবে বলতো ওই তমু! এইটা আবার কি? এই যে রক্ষাকবচ এইটা নিতে আবার ওই বিচারকের কাছে যাইতে লাগে নাকি! কাগজে দেখতাছি নেতারা রক্ষাকবচের লিগা হাইকোর্টে সুপ্রিম কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করতাছে।
আমি বলি, আরে কোর্টের অর্ডার না পাইলে তো নেতারা গ্রেপ্তার হইয়া যাইবো।
মা হয়তো তখন বলতো, দুর্নীতি করবো, টাকার পাহাড় বানাইবো আবার রক্ষাকবচও লাগবো? এই কোন দ্যাশে আইয়া পড়লাম রে তমু? আরে এই কোর্টে যাওনের খরচাপাতি দেয় কে? এইয়ার ল্লিগা তো বড় বড় উকিল ধরতে হয়! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়!
আমি বলি, তুমি তো ঠিকই কইতাছ। তোমার সব কথাই ঠিক।
মা হয়তো বলতো,
কি এই ছাতার মাথার রক্ষাকবচ! এইয়ার লিগা আবার কোর্ট না ব্যাঙ লাগে!রক্ষাকবচ তো অগো মার কাছেই থাকনের কথা তুই তো আমার সোনা পোলা! তুই যখন বাইরে যাতি কারুর কুনজর যাতে না লাগে আমি আমার মুখের একটু ছ্যাপ তর গালে লাগাইয়া দিতাম আর বাঁও কানের উপরে চুলের নিচে একটু কাজলের ছোঁয়া দিয়া দিতাম। তর তো এখনো কোনো বিপদ হয় নাই!
কারণ মার ওই থুতু আর কাজলের কী জোর দ্যাখ, রক্ষাকবচের কাম করছে।
এইয়ার লিগা আবার কোর্টে যাইতে হয় নাকি?
মার থিকা কি কোর্ট বড়?