সহজ ভাষায়, নোভেল করোনা ভাইরাসটিকে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে আটকে রাখার জন্য কোনও অঞ্চল বা জোনকে চিহ্নিত করা। এই অঞ্চলকেই বলা হয় কন্টেইনমেন্ট জোন। সুতরাং, কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করার অর্থ হল, অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে একাধিক আক্রান্ত থাকতে পারে, সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা না-হলে এই অংশে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকী রোগ এখান থেকে অন্যত্রও সংক্রামিত হতে পারে।
মূল লক্ষ্য হল, নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলের আক্রান্ত এবং উপসর্গ থাকা মানুষদের দ্রুত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই এলাকায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ও গতি বাড়ানো। এভাবে আক্রান্তদের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রেখে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রোগটিকে ওই অঞ্চলেই বেঁধে ফেলার চেষ্টা চলে।জোনে কী কী পরীক্ষা ও ব্যবস্থা
এখানে র্যাপিড টেস্টের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, র্যাপিড কিটে সমস্যা হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলিকে আপাতত এই টেস্ট না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন র্যাপিড টেস্ট করা যাচ্ছে না। বদলে আগের মতোই পিসিআর টেস্ট করে রোগ চিহ্নিতকরণ চলছে। দ্রুত পরীক্ষার পাশাপাশি এই অংশের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক সতর্কতা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সর্বোপরি কড়া নজরদারি চালানো হয়।
কারা চিহ্নিতকরণ করে
কন্টেইনমেন্ট জোন চিহ্নিত করার দায়িত্বে থাকে র্যাপিড রিঅ্যাকশন টিম (আরআরটি)। মূলত রাজ্য সরকারের অধীনেই এই বিশেষজ্ঞ দল কাজ করে। কোনও একটি অঞ্চলে করোনা রোগী চিহ্নিত হলেই আরআরটি কাজ শুরু করে দেয়। প্রাথমিকভাবে তারা দেখে নেয়, আক্রান্ত ব্যক্তি শেষ কিছুদিন কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কোন কোন ব্যক্তি তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন ইত্যাদি। একে বলে ‘ম্যাপিং’ এবং ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’। মূলত এই দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই জোন চিহ্নিত করা হয়।
করোনা এপিসেন্টার কী
করোনা রোগী চিহ্নিত হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা ম্যাপিং শেষ করা সম্ভব না হলে অন্য পন্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্তর বাসস্থানকে ধরা হয় এপিসেন্টার। এই এপিসেন্টারের চারপাশের ৩ কিমি পর্যন্ত গোটা জায়গাটাকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ধরে নেওয়া হয়, এই ৩ কিমি অঞ্চলে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে রোগ ছড়িয়ে থাকতে পারে। তাই এই অংশে বেশি সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
বাফার জোন কী
অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে কন্টেইনমেন্ট জোনের পাশাপাশি বাফার জোনও চিহ্নিত করা হয়। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে কন্টেইনমেন্ট জোনের নির্দিষ্ট গণ্ডির পরবর্তী ৫ কিমি এবং গ্রামীণ অঞ্চলের ক্ষেত্রে পরবর্তী ৭ কিমি জায়গাকে বাফার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই অঞ্চলটিকেও মোটের উপর স্পর্শকাতর ধরে নজরদারি চালানো হয়।
কন্টেইনমেন্ট জোনের বিধিনিষেধ
কন্টেইনমেন্ট জোন অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি জায়গা। অত্যাবশ্যক কারণ ছাড়া এই জোনে ঢোকা বা বেরনো যায় না। এখানে ঢোকা এবং বেরনোর পথগুলিতে প্রত্যেকের জন্য থার্মাল স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা থাকে। কে, কেন, কখন বেরচ্ছেন বা ঢুকছেন লিখে রাখা হয়। কন্টেইনমেন্ট জোনে সমস্ত ধরনের গণপরিবহণ ও ব্যক্তিগত পরিবহণ বন্ধ থাকে। তবে আপৎকালীন বিশেষ কিছু ছাড় মেলে। এই অংশে বাজারহাট, দোকান বন্ধ রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরতে মানা করা হয়। চলে কড়া নজরদারি। নিয়ম না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।