রাষ্ট্র কী কী করতে পারে? রাষ্ট্রের অসভ্য হতে বাধা নেই। রাষ্ট্র গণতন্ত্রকে হত্যা করতে পারে। রাষ্ট্র উলঙ্গ হয়ে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে বলাৎকার করতে পারে।
কলমেষু
তমাল সাহা
রাত্রিতে আরও কত ঘনতম অন্ধকার নেমে এলে তাকে তিমির বলে বা বলে অমাবস্যার কালরাত্রি আমি জানিনা।
এটাই কি তবে করালদ্রংষ্ট্রা অমানিশা? যখন তোমাকে একটা পাজামা পরিয়ে খালি গায়ে, খালি পায়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় বলি প্রদত্ত ছাগের মতো বধ্যভূমির দিকে,
আর ক্রমাগত পিঠের উপর পড়তে থাকে বিরাশি সিক্কার অগণন ঘুষি!
প্রতিবাদ মারাও!
তুমি আর্তনাদ করে ওঠো, যাবো আমি মরে।
তোমার নিম্নাঙ্গে থার্ড ডিগ্রির নির্মম আঘাত পড়ে।
দূর থেকে গণতন্ত্রের ডমরু বাজে। উন্মাদ নৃত্য শুরু করে দেয় চামুন্ডার স্যাঙ্গাতেরা।
চৌদ্দ ঘন্টা নিষ্প্রদীপ ঘরে তুমি, একটি টুলের উপর বসে মৃত্যুচেতনার আতঙ্কে স্থবির বা উন্মাদ হবে কি না যখন ভাবছো তখন তারা বলপ্রয়োগে তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে অনির্দিষ্ট নিরুদ্দেশ যাত্রায় এগোতে থাকে।এবার গণতন্ত্রের বিউগল বেজে ওঠে, ব্রেক ড্যান্সে মেতে ওঠে
রাষ্ট্রীয় ভূত-প্রেতগুলি।
তুমি কে? তুমি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে কেন? কী চায় তারা তোমার কাছে? একটি কলম বই তো আর কিছুই ছিল না তোমার সম্বল! তবে! তারা তোমার কাছে কী চেয়েছিল? চায় নি কিছুই। বরং দিতে চেয়েছিল মুখ বন্ধনের শৃঙ্খল।
শারদ বেলায় এই দীপাবলির আগে গণতন্ত্রের যূপকাষ্ঠে নরবলি হবে সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় কাপালিকের আগ্নেয়াস্ত্রের খড়্গে– এমনই তো ভাবছিলে তুমি! অসহায়, নিরুপায় শব্দদুটি ভাসছিল তখন, কাঁদছিলো তোমার প্রিয়জনের ভয়ার্ত মুখগুলি।
তোমার কি মনে পড়েছিল শারদ উৎসবের আগে কোনো এক ভোরে গড়ের মাঠে কোনো নরহত্যার খবর? তুমি কি ভেবেছিলে স্কন্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন মুন্ডটি নিয়ে তারা গেণ্ডুয়া খেলবে! তারা সেদিন সেই সাংবাদিকের মুন্ডটি নিয়ে তাই করেছিল আর তার দুর্দান্ত ডানপিটে শরীরটাই গায়েব করে দিয়েছিল বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায়।
সময় এগোয়। গাঙ্গেয় বাতাসে এখনও সুর ওঠে। ভাগীরথী উপকূলে এখনও জাহাজের ভোঁ বাজে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চলে।
পৃথিবীর ইতিহাস মানেই তো প্রতিবাদীদের অধ্যায়। গণতন্ত্রকে হত্যা, গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে মারা, তাকে কন্ঠ রোধ করে খুন করা আর একটি ইতিহাস রচনার অনিবার্য ঘটনা।
তোমাকে নিয়ে পরিবার তোলপাড়। কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তোমাকে? সশব্দে রটে যায় সেই ঘটনা। সত্তর দশকের সেই বলিষ্ঠ জোয়ান সাংবাদিকটি কী করেছিল সে সময় জানিনা। কারণ কোনো গোরস্থান, শ্মশানভূমি তন্ন তন্ন করেও আমরা তার মৃতদেহ খুঁজে পাইনি। তার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আমরা আর কোনোদিনও শুনতে পাইনি।
তুমিও কাঁদোনি। কারণ সাংবাদিকেরা কাঁদেনা। তাদের কাঁদতে নেই। সেদিন তোমার আবেগরুদ্ধ বাষ্পকন্ঠ অসংখ্য জনতার সামনে যা ছিল তোমার অভিজ্ঞতার অপূর্ব আবেগ। সে তো মানুষকে ভালোবাসার অশ্রু শিশির।
তুমি আমাদের চৈতন্যকে জাগ্রত করেছো। রাষ্ট্র গণতন্ত্রকে কীভাবে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করে, দিয়েছো তার বর্ণনা। এই নরঘাতী গণতন্ত্র যতই মুখোশ পরুক, তার চোখ দুটি কিছুতেই ঢাকা পড়েনা।
চোখে চোখ রেখে কথা বলো। কলমের ধর্মই কথা বলা। কলমের ধর্মই এগিয়ে চলা। কলমকে কে থামাবে? কলম তো কোনোদিনও থামেনা।
এবার কলমের বিদ্রোহ—
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।