অবতক খবর,৪ নভেম্বর: হৈমন্তিক বাতাসে অন্য বার্তা নিয়ে হাজির হলো যুব গোষ্ঠী কল্যাণী। অমাবস্যার ঘনায়মান অন্ধকারকে অগ্ৰাহ্য করে আলোর উৎসবে তারা আনল সাংস্কৃতিক কর্ম প্রবাহ। ২-৩ নভেম্বর কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কে তাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল নাট্যোৎসব। দুদিন অঙ্গন মঞ্চে প্রদর্শিত হল নটি নাটক। প্রতিটি নাটকের মূল লক্ষ্যই ছিল সামাজিক চেতনার জাগরণ।
বিসর্গ অভিনীত নাটক ‘বাঘচাল’ এক সিরিও কমিক্যাল নাটক–রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও আমাদের সামাজিক অবস্থানকে প্রহসন করে তোলে। চাল এখানে দ্বর্থ্যবোধক। রাষ্ট্র নামক বাঘের চাল অর্থাৎ কৌশল। চাল জনগণের উদ্দেশে ছুড়ে দেওয়া খাদ্য। এই চালের জন্য আমরা ছাগল মার্কা জনগণেরা নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে মরি কিন্তু নিজেদের খিদেও মেটেনা। আমরা প্রতিবাদহীন ছাগল। নাট্যদলের স্বগতোক্তি, আমরাও মঞ্চে সেই ছাগলামোই করে গেলাম।বাঘের বিরুদ্ধে কোথায় সক্রিয় হতে পারলাম!
ব্রীহি নাট্যদল অভিনীত ‘মৃত্যু উপত্যকা’-মূল উপজীব্যই ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। মানুষের জীবন রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা কিভাবে নির্যাতিত, অত্যাচারিত তা স্পষ্টতই নাটকের উচ্চারিত হয়েছে। আয়না নাট্য গোষ্ঠীর ‘সিংহমুখ’ তুলে ধরেছে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। একটি কুষ্ঠ নিরাময় বিষয়ক গবেষণা, একটি আবিষ্কারকে কিভাবে ফেলে দিতে চায় এই ব্যবস্থা, কিভাবে এক কর্মীকে প্রতিষ্ঠা করার বিরুদ্ধে তথাকথিত সমাজসেবী চিকিৎসকরা তৎপর হয়ে ওঠে এবং তদন্ত যে একটা লোক দেখানো প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয় তা তুলে ধরে এই নাটক।
অন্য কন্ঠ ‘ঝগড়া বৃত্তান্ত’র মাধ্যমে পারিবারিক ঝগড়াকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে যায়। যুদ্ধকে হাতিয়ার করে কিভাবে সারা বিশ্বে অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তা বুঝিয়ে দেয় এই নাটক। নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দ নির্দেশিত ধ্বনিমা প্রযোজিত ‘কাজের দিন’ নাটকটি প্রতিভা চক্রবর্তীর একক অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে এক গৃহপরিচারিকার জীবনের বাস্তবতা এবং তার সংগ্রাম। পথসেনা অভিনীত ‘ঘোড়া’ নাটকটি নারীর মূল্য সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির একটি উল্লেখযোগ্য প্রয়াস। সমাজে ঘোড়া ও নারীর মূল্য সমান কিনা এ প্রশ্ন তোলে এই নাটক এবং বৈদিক খনি মধুর তত্ত্বকে খারিজ করে দেবার স্পর্ধা দেখায় এই নাটক। নারী সম্বন্ধে অবাস্তব চিন্তা ধারণা এই নাটকে বিদ্রূপাত্মক হয়ে ওঠে।
ভয়েজ অব ওমেন- এর নাট্যকর্মীরা ‘দহন’ নাটকের মধ্য দিয়ে হাথরস ধর্ষণ কাণ্ডের আবর্তে বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীর জীবন প্রতি মুহূর্তে কিভাবে ধর্ষিত হয় তা মঞ্চায়িত করে তোলে এবং নারীদের নিজেদের সক্রিয় হয়ে ওঠার আহ্বান জানায়।
বিজ্ঞান দরবার অভিনীত :রাম রহিমের দেশে’ উপস্থাপিত হয় দাঙ্গার বিরুদ্ধে মানবিকতার কণ্ঠস্বর এবং মেহনতী জনতার জয়গান।
চেনা আধূলি অভিনীত ‘জামালো মকদম’ লকডাউনের সময়কালের এক বাস্তবতার দৃশ্যপট। শ্রম বিক্রি করে খাওয়া এক পরিযায়ী কিশোরীর নাম জামালো মকদম। লঙ্কাক্ষেতের কিশোরী শ্রমিক।এ এক বাস্তব চরিত্র। তার শ্রমিষ্ঠ জীবনে লকডাউন কিভাবে অভিশাপ ডেকে আনে এবং তার মৃত্যু অবধারিত করে তোলে, তার মঞ্চায়ন প্রদর্শিত হয় এই নাটকে।