অবতক খবর,১৪ নভেম্বর: আজ কাঁচরাপাড়া এরিয়া কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কবিগুরু রবীন্দ্র পথস্থিত অতিথি ভবনে। এদিন সম্পাদকীয় প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার শেষে নতুন কমিটি গঠিত হয়। এতে দেখা যায় যে,১২ জনের কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটিতে ১১ জনই বিগত এরিয়া কমিটির সম্পাদক দেবাশিস রক্ষিত,যিনি ববি নামে পরিচিত তার সমর্থক বা পার্টিতে যে স্বজনপোষণে পরিপূর্ণ এবং গণতন্ত্র নেই তা রাজনৈতিকভাবে দেখা গিয়েছে যে কাঁচরাপাড়া সিপিএম ২টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। একটি গোষ্ঠী দেবাশিস রক্ষিত , আর একটি গোষ্ঠী শম্ভু চ্যাটার্জী দ্বারা পরিচালিত। উল্লেখ্য এই দুই ব্যক্তিত্বই একদিন সম্মিলিত ভাবে পার্টি থেকে একসময়ের দোর্থণ্ডপ্রতাপ নেতৃত্ব বৃন্দাবন দাসের কায়েমি স্বার্থ ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে থাকে উচ্ছেদ করে পার্টির নেতৃত্বে এসেছিলেন। অভিযোগ দেবাশিস রক্ষিতের গোষ্ঠীতে এখন বৃন্দাবন দাস গোষ্ঠীর প্রাধান্য।বৃন্দাবন দাস বর্তমানে প্রয়াত।

বর্তমান কমিটিতে শম্ভু চ্যাটার্জীর অনুগত বলে পরিচিত একমাত্র হাবলি সরকার
স্থান পেয়েছেন বলে জানা গেছে। দেবাশিষ রক্ষিতের গোষ্ঠীর পক্ষে বিগত কমিটির সদস্যের মধ্যে প্রত্যেকেই রয়েছেন, বাদ পড়েছেন শুধু প্রসূন বাগচি। এই কমিটি থেকে বিগত কমিটির শম্ভু চ্যাটার্জির পক্ষে বাদ পড়েছেন শম্ভু চ্যাটার্জী নিজে,শঙ্কর লাল বসাক, মানস ভট্টাচার্য্য,তনু দে,গৌরী চ্যাটার্জী,এমনি সূত্রের খবর।

কমিটি গঠনের পক্ষে যে প্যানেল বিদায়ী এরিয়া কমিটির সম্পাদক দেবাশিস
রক্ষিত ঘোষণা করেন,তাতে ১১ জন সদস্যই ছিলো তার পক্ষের, একমাত্র তিনি এই কমিটিতে শম্ভু চ্যাটার্জীকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। অর্থাৎ শম্ভু চ্যাটার্জীর পক্ষের যে সমস্ত সদস্যরা বিগত কমিটিতে ছিলেন (শম্ভু চ্যাটার্জী ছাড়া) সকলেই বাদ পড়ে যান। অনেক লোকদেখানো আবেদন- অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত শম্ভু চ্যাটার্জী নিজের নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি বলে জানা যায়, অর্থাৎ তাকে কমিটিতে রেখে বলির পাঁঠা বানানোর মতলব বা কৌশল করা হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রের খবর।এটি বুঝতে পেরেই শম্ভুবাবু নাকি কুইট করেন। অর্থাৎ নতুন কমিটিতে একমাত্র শম্ভু চ্যাটার্জীর পক্ষের হাবলি সরকার কমিটির সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন।

আজ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাজ্য কমিটি এবং জেলা কমিটির সদস্য পলাশ দাস। উদ্বোধন কার্যক্রমের পরেই তিনি চলে যান। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কমিটি এবং জেলা কমিটির সদস্য সুভাষ মুখার্জী এবং জেলা কমিটির সদস্য মালয় ভট্টাচার্য্য। সম্মেলন পরিচালনায় জেলা এবং রাজ্য স্তরের নেতৃত্বরা প্রথমেই ঘোষণা করে দেন, যে কমিটি গঠিত হবে সেখানে যেন কোন ভোটাভুটির বিষয় না থাকে এবং পার্টি যে ঐক্যবদ্ধ সেটি প্রমাণ করতে হবে। ফলত প্রশ্ন ওঠে কাঁচরাপাড়া এরিয়া কমিটিতে নিশ্চিতভাবে অনৈক্য রয়েছে। ‌নাহলে কন ভোটাভুটি করা যাবে না এবং অনৈক্যের প্রশ্ন উঠছে কেন? অর্থাৎ এক্ষেত্রে সিপিএম শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে। কিন্তু তারা শাক ঢাকবে কি দিয়ে? এদিন সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর উল্লেখযোগ্য দুজন বক্তা ছিলেন। যারা হলেন,পুতুল সরকার এবং সমীর দত্ত। পুতুল সরকার বলেন যে, সাড়ে তিন বছর ধরে পার্টির মধ্যে যে অনৈক্যের বাতাবরণ চলছে, পার্টি এটি জানে। তারা কেন এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা অবলম্বন করেন নি, তিনি বুঝতে পারছেন না। পার্টির মধ্যে জোর করে ঐক্য স্থাপন করা যায় না, পার্টি যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকে তাহলে গণসংগঠন, শাখা সংগঠনগুলিকে
চাঙ্গা করা যায় না। সামনে পৌর নির্বাচন। জনগণের কাছে তারা কোন বার্তা নিয়ে যাবেন?
সমীর দত্ত কেন এত বছর অতিক্রান্ত হলেও পার্টির অনৈক্যের বিষয়টি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও জেলা বা রাজ্য কমিটিতে বারবার অবগত করা হলেও তারা কেন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেন না,এ বিষয়ে তিনি সোচ্চার হন।

বামপন্থী দল হিসেবে জনমনে বামপন্থীদের ঐক্য সম্বন্ধে যে ভাবনা গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল,আজকের সম্মেলনে তা প্রতিফলিত হয়নি। বোঝা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী দল হিসেবে সিপিএম স্থানীয়ভাবে কত দূর এগোতে পারবে এবং আসন্ন পৌর নির্বাচনে তারা কি পথ গ্রহণ করবেন, জনগণের কাছে কি বক্তব্য রাখবেন এটি রাজনৈতিকভাবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক ভাবে বিশেষভাবে তৃণমূল দলের কাছে এই সম্মেলন ও কমিটি গঠন সুবিধার জোগান দিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। পার্টির মধ্যে এই অনৈক্য এবং এই দ্বন্দ্ব নিরসনে পার্টি উচ্চ নেতৃত্বের অক্ষমতা স্থানীয়ভাবে প্রকট হয়ে উঠলো, এর ফল যে সুদূর প্রসারী এবং ধ্বংসাত্মক অনিবার্য।