বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর ::- চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই কাঁচরাপাড়া পৌরসভার নির্বাচন হতে চলেছে। যদিও এই পৌরসভাকে ব্যারাকপুর পৌর নিগমের আওতায় আনার কথা হয়েছিল। কিন্তু তা না হয়ে রাজ্যের অন্যান্য পৌরসভা গুলির মত কাঁচরাপাড়া পৌরসভার নির্বাচনও নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল মাসেই হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এবং সিট সংরক্ষণের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কাঁচরাপাড়ার সমস্ত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সিট গুলির তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। দেখে নেওয়া যাক কার জন্য কোন সিট সংরক্ষিত রয়েছে-

কাঁচরাপাড়ার ২৪টি ওয়ার্ডের ২৪ জন প্রতিনিধির জন্য ভোট হবে। এই ২৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা রয়েছে। ৫টি ওয়ার্ড এসসি ক্যান্ডিডেটদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। ৩,৯,১৮,২০ এবং ২২ নং ওয়ার্ড মহিলা এসসি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। বাকি ১৩টি ওয়ার্ড সাধারণ প্রার্থী অর্থাৎ সাধারণের জন্য করা হয়েছে।

সর্বপ্রথম কথা বলা যাক কাঁচরাপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। ৩ নম্বর ওয়ার্ড বীজপুর বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ের কাছের লোক কাউন্সিলর রমেন মল্লিকের। কাঁচরাপাড়া বাবু ব্লক সংলগ্ন রেলওয়ে অঞ্চল ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। এখানে অবৈধ নির্মাণ,পুকুর ভরাট, অবৈধ মাছের কারবার,রেলের জায়গা বেআইনিভাবে বিক্রি, জবরদখল সহ বিভিন্ন অবৈধ কারবারের জন্য এই ওয়ার্ডটি বিখ্যাত। যার কারণে এই ওয়ার্ডটিকে প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এবার এই ওয়ার্ডটি এসসি মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে ১৮ নং ওয়ার্ড মানিকতলা সংলগ্ন অঞ্চল। এখানে বিজেপি প্রার্থী তাপস বিশ্বাস জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এই ওয়ার্ডটিও এখন sc মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৪,৭,১১,১৪,১৭ এবং ‌২৩ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।

উল্লেখ্য যে,৭ নম্বর ওয়ার্ড ব্যবসায়িক কেন্দ্র মন্ডল বাজার সংলগ্ন এলাকার। এই ওয়ার্ডটি মোটা টাকা কামাইয়ের কেন্দ্র বলে বিশেষ পরিচিত। পুকুর ভরাট, অবৈধ নির্মাণ এবং অবৈধ বসতির জন্য ওয়ার্ডটি পরিচিত। আর এর নেপথ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সঞ্জীব সাহা রয়েছে এটি অনেকে মনে করেন। এছাড়াও এই ওয়ার্ডটি ডেঙ্গু প্রভাবিত বলে মনে করা হয়। প্রত্যেক বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর এই ওয়ার্ড থেকেই শোনা যায়। এখন এই ওয়ার্ডটিও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।

এছাড়াও কাঁচরাপাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডও খুব বিতর্কিত ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডটিও বীজপুর বিধায়কের প্রিয় বন্ধু বিনয় দাসের। এই ওয়ার্ড থেকে বিনয় দাস তৃণমূল এবং বিজেপি দুই প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন এবং পরে তৃণমূলে শামিল হয়ে যান। এই ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ, সরকারি জমি দখল, পুকুর ভরাট, অবৈধ মাছের কারবার, জবরদখল করে জমি বিক্রি ও অন্যান্য অবৈধ ক্রিয়াকলাপের জন্য বিখ্যাত। সোজা কথায় এই ওয়ার্ডকে অবৈধ কারবারের ওয়ার্ড বলা যেতে পারে। আর এই ওয়ার্ড থেকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা আমদানি বাঁধাধরা। আর উপরি আমদানির তো কোন সীমা নেই। আর এই সকল কার্যকলাপে বিনয় দাসের সামনে অন্য কোন প্রার্থী টিকতে পারবে না। যদিও বিনয় দাস নিজের গুরু শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গে বিজেপিতে শামিল হওয়ার পর এই সকল অবৈধ ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরেই রয়েছেন।

এই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হওয়ার আশা নিয়ে বসে থাকা রামা শংকর গিরি বিগত বেশ কিছু বছর ধরে নিজের জায়গা তৈরীর জন্য সমাজ সেবায় লেগে পড়ে রয়েছেন। এবছর তৃণমূল থেকে তিনি প্রার্থী হবেন এটাই মনে করা হচ্ছিল। সমাজ সেবার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা রামা শংকর গিরি এই ওয়ার্ডের জন্য খরচ করে ফেলেছেন। বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করে দিনরাত মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই ওয়ার্ডটি এইবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে রামা শংকর গিরি এইবারও প্রার্থী হওয়ার কোন সুযোগ পাচ্ছেন না।

মানুষ মনে করছেন এই সকল জনসেবা এবং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ তার বৃথা গেল। বিভিন্ন নেতারাও এটাই নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন যে,এই ওয়ার্ড থেকে রামা শংকর গিরিই প্রার্থী হবেন। কিন্তু তাদের সব আশায় জল ঢেলে দিল এই পদ সংরক্ষণ। এ বিষয়ে রামা শংকর গিরি বলেছেন, ‘এতে আমি খুশি। কারণ আমি ওয়ার্ডবাসীদের জন্য কাজ করেছি। আর তারা আমার কাজে খুশি, ‌ এটাই আমার জন্য অনেক। আর মানুষ আমাকে যতটা ভালবাসে আর ভালোবাসবেন, মানসম্মান দিয়েছেন সেটাই বা কম কিসের। যদি দল আমাকে অন্য কোন ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করে তবে আমি সেই ওয়ার্ডের জন্য এইভাবেই কাজ করে যাব।’

এবার কথা বলা যাক ২২ নং ওয়ার্ড নিয়ে। এই ওয়ার্ডটিও sc মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। এটি কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান সুদামা রায়ের ওয়ার্ড। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই সুদামা রায় এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়ে আসছেন। এবার এই ওয়ার্ডটি তাঁর হাতছাড়া হতে চলেছে। কারণ এবার এই ওয়ার্ডটি এসসি মহিলার জন্য সংরক্ষিত। ওয়ার্ড হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি সুদামা রায়ের রাজনৈতিক অবসরও প্রায় নিশ্চিত। এই ওয়ার্ডটিকে রেল কোয়ার্টারের ওয়ার্ড বলা হয়। কারণ এখানকার রেল কোয়ার্টার গুলিতে রেল কর্মচারীরা বসবাস করেন।

এছাড়াও বসবাস করেন রেলে কর্মরত শ্রমিকরা। তবে নাগরিক পরিষেবার নামে এখানে নামমাত্র কাজ করতে হয় পৌরসভা তথা পৌর প্রধানকে। সমস্তই রেলের তরফে করা হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ,এই ওয়ার্ডের বেশ কিছু রাস্তা পৌরসভার ফান্ড থেকে কাউন্সিলর করিয়েছেন।

চেয়ারম্যান সুদামা রায় প্রতিবেশী ওয়ার্ড অর্থাৎ ১৯ নং ওয়ার্ড রেল প্লট,যেটা রেল কর্মচারী তথা হিন্দীভাষীদের ওয়ার্ড বলে মনে করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান সুদামা রায় ১৯ নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য ওত পেতে রয়েছেন। এই ওয়ার্ড থেকেই তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন, এমনটাই সুনিশ্চিত করে রেখেছেন। যদিও জনক সিং প্রথম থেকেই প্রার্থীর দাবিদার হয়ে বসে আছেন বলে মনে করছেন একাংশ। আর তিনি এই ওয়ার্ডেই থাকেন। জনক সিং দীর্ঘদিন ধরেই এই ওয়ার্ডের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে এই ১৯ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হওয়ার লাইনে রয়েছেন ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উৎপল দাশগুপ্ত। কারণ ২০ নং ওয়ার্ড তাঁর হাতছাড়া হতে চলেছে।‌ ২০ নং ওয়ার্ড এসসি মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত। ১৯ নং ওয়ার্ড যুব তৃণমূল সভাপতি সুজিত দাসের নিজস্ব ওয়ার্ড। বিগত নির্বাচনেও তিনি এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন। এবার তিনি স্বেচ্ছায় এই ওয়ার্ড ছেড়ে নিজের বাসস্থান ওয়ার্ড অর্থাৎ ১২ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে চলেছেন। সুতরাং ১৯ নং ওয়ার্ড ফাঁকা হতে চলেছে। ফলে তিনজন এই ওয়ার্ডের প্রার্থীর‌ দৌড়ে শামিল হয়েছেন। এবার কে এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন,সুদামা রায়,নাকি জনক সিং,না উৎপল দাশগুপ্ত,তা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু এই তিনজনই প্রার্থী হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে কাঁচরাপাড়ার ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি মহিলা এবং ১৩টি সাধারণের জন্য। আর সকলেই নিজের নিজের জায়গা সুনিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা। সময়ই বলবে কোন ওয়ার্ড কার ঝুলিতে পড়বে। আর কোন রাজনৈতিক দল কাকে কোন ওয়ার্ডের প্রার্থী করবে।