নৈহাটীতে কয়েদি,কাঁচরাপাড়ায় বিচারক নজরুল
তমাল সাহা
২৪ মে।আজ কবি কাজি নজরুল ইসলামের জন্মদিন। আমরা তাঁর জন্য গর্বিত। ভারতবর্ষের এই কবি রাজনৈতিক দল গড়েছিলেন ১৯২৬ সালে। দলের নাম বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিকদল।
এই কবির অনশন ভাঙতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, জীবন কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী আর তাঁর জন্য সভা করেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। কবি নজরুল কয়েদি হয়ে এসেছিলেন নৈহাটিতে। ২৩ নভেম্বর ১৯২২। ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। এই কবিতা লেখায় রাজদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার হলেন তিনি।
কবি গ্রেপ্তার হলেন। বিচার–একবছর সশ্রম কারাদন্ড। ১৪ এপ্রিল ১৯২৩। তাঁকে স্থানান্তরিত করা হল হুগলি জেলে। কবিকে নামানো হল নৈহাটী স্টেশনে। নৈহাটী স্টেশনেই তাঁকে পরানো হল কয়েদির ইউনিফর্ম ও খাটো কুর্তা। কবি কয়েদিতে রূপান্তরিত।
এই কবি ১৯৪০ সালে কাঁচরাপাড়ায় চলে এলেন বিচারক হিসাবে। ১৯৪০ সাল। রেলওয়ে ওয়েলফেয়ার উইক। তখন প্রতি বছর
একটি বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত হাইন্ডমার্স ইনস্টিটিউটে। সপ্তাহব্যাপী সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতো। সেবার তিনি বিচারক হয়ে এসেছিলেন তাঁরই লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আবৃত্তিকারের শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করতে এবং এই বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছিলেন তিনি হলেন সত্যনারায়ণ মুখার্জি। আমাদের আজকের গল্পকার ও ঔপন্যাসিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পিতা। দ্বিতীয় হয়েছিলেন ডালিম বিশ্বাস। বাচিক শিল্পী নীলাদ্রি বিশ্বাসের পিতা। তাঁদের হাতে তিনি পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন।
সেখানে যে খেয়াল প্রতিযোগিতা হয়েছিল তাতে প্রথম হয়েছিলেন নীহার মুখোপাধ্যায়। তাঁর হাতেও তিনি পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন।
তিনি হালিসহর হাই স্কুলেও এক সভায় বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন এবং কোন ফাঁকে সেখান থেকে সরে গিয়ে কোথা থেকে যেন চপ-মুড়ি কিনে এনে খেতে শুরু করেছিলেন সেই ইস্কুলের এক কোণে। একথা জানিয়েছিলেন ওই ইস্কুলের প্রয়াত শিক্ষক গৌরীপদ গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন হাইন্ডমার্স ইনস্টিটিউট,রেলওয়ে ওয়েলফেয়ারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। তাঁকে স্মরণ করে ২৯ মে,২০০৩ হাইন্ডমার্স ইন্সটিটিউটের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম ইন্সটিটিউট। তিনি যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন, সেই চেয়ারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এবং সে সময়কার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের একটি ছবি হাইন্ডমার্সে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। আলোকচিত্রটি তুলেছিলেন কেতন চট্টোপাধ্যায় এবং সংগ্রহ করে দিয়েছেন মণি ভট্টাচার্য্য।
তাঁকে স্মরণ করে হাইন্ডমার্সের সামনে উন্মুক্ত অঞ্চলে নজরুলের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মূর্তিটি সম্পূর্ণ সাদা। নির্মাণ করেছেন কৃষ্ণনগরের প্রখ্যাত শিল্পী রাষ্ট্রপতি পূরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তি পালের পুত্র কার্তিক পাল।খরচ পড়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা জানিয়েছেন তৎকালীন ইনস্টিটিউট সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য কুমার ঘোষ।