অবতক খবর,১২ আগস্ট: কত লোকের কত যে মুদ্রাদোষ তার খোঁজ কে রাখে? কেউ দাঁত দিয়ে নখ কাটে। কেউ আবার পেন্সিল খায়! কিন্তু রোজ মুঠো করে মাথার চুল ছিঁড়ে সোজা মুখে চালান? এর পর গিলতে যতটা সময়! এমনটা বড় একটা শোনা যায় না। গত দশ বছর ধরে এই কাজটাই করেছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের রীতা দাস।রীতা ১৬ বছরের কিশোরী।

আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্কুলে যায়। লেখাপড়া করে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে। খেলে বেড়ায়। কিন্তু যেদিন থেকে বন্ধুরা জানল যে সে মাথার চুল খায়, এক এক করে সরে গেল। গত ৩১ মে মেয়েকে নিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রো বিভাগের আউটডোরে হাজির রীতার বাবা-মা। আউটডোরের চিকিৎসককে জানানো হল, মেয়ের পেট ক্রমশ ফুলছে।

বারবার বমি হচ্ছে। খাওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। ডাক্তারবাবু দেখলেন। কয়েকটা ওষুধ দিলেন। নিয়ম করে খেতে বলে দশদিন পর ফের আসতে বললেন।

দিন দশেক পর মেয়েকে নিয়ে ফের আর জি কর হাসপাতালে। উপসর্গ কমার বদলে আরও বাড়ল। কেমন যেন সংশয় হল ডাক্তারবাবুর। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এবার এন্ডোস্কোপি করা হল। রিপোর্ট হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ। মেয়ের পেটের মধ্যে শক্ত রোমশ কিছু দলা পাকিয়ে আটকে আছে। মেয়ের মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত দশ বছর ধরে মাথার চুল ছিঁড়ে খায়। আগে কম করত। যতদিন যাচ্ছে সমস্যা বাড়ছে। সব শুনে রীতাকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে পাঠানো হল। ফের আরেক দফা পরীক্ষা।

১৬ বছরের মেয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তারবাবুদের অকপটে সব বলেছে। এক চিকিৎসকের কথায় , “এটা একধরনের রোগ। তবে খুবই বিরল। রোগের নাম ট্রাইকোবেজোয়ার। এই ধরনের রোগী নিজের অজান্তে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলে। পরে খেয়ে নেয়। সমস্যা হল। চুল হজম হয় না।

তাই পাকস্থলীতে জমা হয়। সঙ্গে পেটে নিঃসৃত বিভিন্ন রস। সব তালগোল মিলিয়ে পেটে জমা হয়।’’ মঙ্গলবার সার্জারি বিভাগের ছয় চিকিৎসক প্রায় দেড় ঘণ্টা অপারেশন করে পেট থেকে দশ বছরের জমা চুল বের করেছেন। ওজন কম করে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম। অপারেশনের পর রীতা ভালো আছে। স্বস্তিতে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরাও।