বিনয় ভরদ্বাজ, অবতাক খবর :: আগামী মঙ্গলবার দিল্লির তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অবাক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন আপ নেতারা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা সহ মোদি বিরোধী সমস্ত নেতারা দিল্লির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পক্ষ থেকে নেমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু একজনকেও নিমন্ত্রণ পাঠাননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সকল বন্ধু নেতাদের বাদ দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন তার প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তাই সকলকে বাদ দিয়ে মোদিকে নেমন্তন্ন করায় অবাক সকলেই।
ভাবা হয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশের সমস্ত প্রধান বিরোধী দল নেতারা উপস্থিত হয়ে দেশকে ঐক্যের বার্তা দেবেন এনআরসি ও CAA বিরুদ্ধে, মোদির বিরুদ্ধে, তোপ দাগবেন দিল্লি থেকে কিন্তু সকল বিরোধীদের এই স্বপ্নে জল ঢেলে দিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
এখন সকলের মনে একটাই প্রশ্ন কেন 180 ডিগ্রী একেবারে ঘুরে কেজরিওয়াল তার বন্ধু দলকে নিমন্ত্রণ না করে তার প্রধান শত্রু ও প্রধান বিরোধী নরেন্দ্র মোদিকে নেমন্তন্ন করলেন ?
এই প্রশ্নের উত্তরে আপ নেতারা জানান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির বাসিন্দাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাই তিনি দিল্লির মানুষকে নিয়েই তাদের সঙ্গে তাদের আনন্দ ভোগ করতে চান, তাদের সঙ্গেই তিনি শপথ গ্রহণ করতে চান। তাই দিল্লির সমস্ত নাগরিকদের তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন, নেমন্তন্ন পাঠাননি কোন বিরোধী দল বা কোন বন্ধু দলের নেতা নেত্রীদের।
শুধু তাই নয় আপ নেতারা মনে করেন দিল্লি বাসিন্দারা দিল্লির জন্য, দিল্লির উন্নয়নের জন্য, দিল্লির কাজের জন্য, আপে কে ভোট দিয়েছেন। তারা কিন্তু সিএএ বা এনআরসি নিয়ে এই ইস্যুগুলোতে ভোট দেননি। কারণ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মানুষের কাছে সিএএ বিরোধী বা এনআরসি বিরোধী স্লোগান নিয়ে যাননি, তিনি গেছেন শুধু তার কাজের জন্য, উন্নয়নের জন্য আর এই ইস্যুতে তিনি জয়লাভ করেছেন । তাই তারা মনে করেন যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মঞ্চ কে CAA বিরোধী বা এনআরসি বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার কোন মানে নেই।
এছাড়াও অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার দল মনে করে যে উন্নয়নের জন্য, দিল্লিবাসীর ভালোর জন্য বিরোধীরা কোনো কাজে লাগবে না বরং কাজে লাগতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই দিল্লির উন্নয়নের জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই নিমন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রীর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
যদিও নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদী দল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি আহ্বান জানিয়ে জনতার কাছে বলেছিলেন, কোন দেশ বিরোধী শক্তিকে ভোট দেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর আবেদন সত্ত্বেও দিল্লির জনতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার দল আপকে বেছে নিয়েছে ।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে কেজরিওয়ালের এই একটা নেমন্তন্ন থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন পরিষ্কার হয়ে গেছে যেমন :
1. অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে নেমন্তন্ন করে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার বিরোধী নন বরং তিনি বিজেপিকে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেন কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি দিল্লির স্বার্থে মিলেমিশে কাজ করতে চান।
2. অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নেমন্তন্ন দিয়ে, তার দিল্লির জনতার কাছে একটি বার্তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে দিল্লির মানুষের জন্য সব সময় সব রকম সমঝোতা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি শুধু রাজনীতি করতে আগ্রহী নন বরং সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে দিল্লির বাসিন্দাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও আপন করে নিতে তার কোন আপত্তি নেই।
3. অরবিন্দ কেজরিওয়াল সকলকে প্রত্যাখ্যান করে আরও একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে তিনি দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের তার নিজের মঞ্চকে মোদির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবেন না। মমতা সহ অন্যান্য বিরোধীরা যারা এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করে ফাঁকা মাঠে গোল করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল তাদের স্বপ্নতে জল ঢেলে দিলেন তিনি।