ফি-বছর কোজাগরী পূর্ণিমা আসে। কিন্তু কোনো জাগরণ কি ঘটে? কেউ কি জাগে? লক্ষ্মী আসে।আমাদের চলমান লক্ষ্মীদের কী লাভ হয়?
কোজাগরী
তমাল সাহা
সরস্বতীর মা দুর্গা হলেও
এই দেশে তার মা লক্ষ্মী হতে পারে, হয়।
এই ভূমে বারোমাসে তেরো পার্বণ
দেবদেবীর আগমন তাদেরই বিজয়।
বাপের নাম নারায়ণ তো কি!
কন্যা হতে পারে লক্ষ্মী।
দেবতাদের সম্পর্ক নিয়ে
লেখা বড় ঝক্কি।
বাপের নাম মহাদেব
মেয়ের নাম হয়ে যায় উমা।
এসব লেখা অন্যায় অপরাধ
করে দিও ক্ষমা।
দেবদেবী দেখেনি কেউ,
আমি তাদের স্বচক্ষে দেখি।
জ্যান্ত দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী
দোরে দোরে ঘোরে।
বাসন মাজে, কাপড় কাচে,
ঘর বারান্দা সাফ সুতরো করে।
বড় হাহাকার, খিদে এই পেটে।
কত দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী—
একই সঙ্গে মা-মেয়ের শরীর
মূলধন হয়ে সোনাগাছি খাটে।
তাদের নেই সিংহ, হাঁস, পেঁচা
কোনোরূপ বাহন।
শ্রমের লিপিতে লিখে যায়
পেটের দানাপানির সাতকাহন।
যা হোক, লিখি অন্য এক পদ্য।
জীবন ছন্দোময় হলেও বাস্তবে এক গদ্য।
গৃহকর্ত্রী বলে, ও সরস্বতীর মা, শোনো!
কাল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।
পুজোর বাসন কোসন মাজতে হবে
একটু আগেই চলে এসো যেন।
সরস্বতীর মা লক্ষ্মী বলে,
দিদিমণি! কাল তো ছুটি নেব ভাবছি।
আমার ঘরেও পুজো হবে,
কিনতে হবে লক্ষ্মীর সরা।
ঘরে ঘরে পুজো হবে
আমি কি হবো লক্ষ্মীছাড়া?
দিদিমণি বলে,
তাহলে ছেড়ে দে কাজ!
সল্টলেকে বাড়ি।
কী তার তিরিক্ষি মেজাজ!
আমার লক্ষ্মীর চেয়ে
তোর লক্ষ্মী হলো বড়ো!
বাড়ি বাড়ি কাজ করে খাস,
এতো ভিখিরির বড় দুঃসাহস!
চাল নেই, চুলো নেই লক্ষ্মীপুজো করো!
কোজাগরী পূর্ণিমা—
মাটির লক্ষ্মী ঘরে আসে।
শুনতে পায় কি এসব কথা!
জ্যান্ত লক্ষ্মীদের মান নেই,
জোটে শুধু অপমান
জীবন জুড়ে বিষাদগাথা।
‘আজ পুর্ণিমা তিথি,
ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস’।
এই তো জীবন,নিখিলেশ!
লক্ষ্মীদের ইতিহাস!