এবারের বসন্তের দিনগুলো কেবল পাতাঝরাতেই থেমেছিল। ইউরোপের শীতও এখন মধ্যগগনে এমন পরিবেশে ক্রিস্টানদের বিশেষ উৎসবের পর্বটা এখানে একদমই ছন্নছাড়া,কোনোরকমে যেন কেটে গেলেই হলো। বেহিসাবী মৃত্যুতে পৃথিবী আজও যেন টলোমলো। মহামারীর কোপে বেসামাল হয়েছে আস্ত একটা মহাদেশ, চোখের নিমেষে এলোমেলো হয়ে গেছে ব্রিটেনের ফেলে আসা দিনগুলো। এর মধ্যেই আরেকটা ক্রিস্টমাসের প্রারম্ভ যেটা আগের তুলনায় বড্ড শান্ত যা সচরাচর চোখেই পড়েনি কখনো, এই বিষয়ে এখানকার প্রায় সকলেই সহমত।
কখনো প্রাচীন ইতিহাস কখনো বা বর্তমান একসাথে বলে এসেছে টেমসের তীরের পুরোনো সেই শহরটার কথা, লন্ডন নামক শহরটা থেমে থাকেনি কখনো। কিন্তু কভিড কালের উলটপুরানে এই প্রথম নিস্তব্ধ ব্রিটেনের লন্ডন। নিমেষেই দুনিয়ার যাবতীয় চোখের আড়ালেই চলে গেছে সাজানো ক্রিস্টমাসের সময়টা, এমন মহামারী কালে সেটাই যে স্বাভাবিক; নাহলে এতদিনে পৃথিবীর নামি দামী ক্যামেরার লেন্সবন্দি হতো টেমসের তীরের ঐ রঙিনব্রিজটা। এরকমটা নাহলে হয়তো ব্যাকিংহাম প্যালেসের রংটাও পুনরায় রঙিন হতো, বছরের এতগুলো দিনের মধ্যে এবারে একদিনো প্রাসাদের দেওয়ালে রঙতুলির কোনো আঁচড় পড়লো না। হয়তো স্কটিশদের এডিনবার্গের প্রিন্সেস স্ট্রিটও গতবারের মতো আবারও জ্বলে উঠতো, পুরোনো শহরটা দেশি বিদেশির ভিড়ে নতুন করে সেজে উঠতো আরেকবার। রাস্তার দুধারে লোকজন সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায়, ট্রাম লাইন পার হয়ে একদিক থেকে অন্যদিক যাবে বলে। এবছরের প্রিন্সেস রাস্তায় বিরাজকরছে শুধুই শুন্যতা।
এরকমটা নাহলে প্রিন্সেস স্ট্রিটের মেলা প্রাঙ্গনে এতক্ষনে হিড়িক লেগে থাকতো সালসা কিংবা ম্যাজিকের জন্য। কনকনে ঠান্ডায় বারবার কফির চুমুকে ধোঁয়া উঠতো। নভেম্বরের শুরু থেকেই এতদিনে লন্ডন কিংবা এডিনবার্গ মজে যেত বড়দিনের অপেক্ষায়, লক্ষ্ হাজার পাউন্ড খরচ করে রানীর দেশের আয়োজকরা প্রতি বারের মতো এবারেরও তাক লাগতো বিশ্বকে। প্রতিবারের মতো এবারেও ইউরোপের অন্য দেশের সাথে টক্কর দিতে প্রস্তুত থাকতো ইউনাইটেড কিংডম। স্কটিশ ব্রিটিশদের উৎসাহ হৃদয়ের মেলবন্ধন বছরটাকে আরেকবার স্মরণীয় করে রাখতো। কিন্তু এমনটা আর হলো কৈ? মরুভুমির শূন্যতা ছড়িয়েছে ইউরোপের দিগন্তে। লন্ডন কিংবা এডিনবার্গ সর্বত্রই উৎসাহ আনন্দ যা ছিল যেন সবই মিলিয়েছে অন্ধকারে। ক্রিস্টমাসের বর্ণময় রূপ লাবণ্য দিনে দিনে ফিকে পড়েছে, ব্রিটেনের শহরতলিতে পড়ে রয়েছে শুধুই, কেউ বাদ যায়নি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড ওয়েলস উৎসবের বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা নেই। বারে বারে সরকারি নির্দেশিকায় বন্ধ হয়েছে ব্রিটেনের সমস্ত আয়োজন। আজকাল ইউনাইটেড কিংডমের কর্ম থেকে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি স্তরে ঘুরে বেড়ায় ব্যাতিক্রমী নানাবিধ বেরঙিন ছবি, ক্রিস্টমাসের অন্ধকারের সময়টা তাদেরই সাক্ষী। হঠাৎ করেই যেন একটা বিরতি পড়েগেলো ঘটে চলা জীবনে। বিজ্ঞানের এতকিছু অগ্রগতির মধ্যেও চোখের সামনে মানুষ অসহায়ের মতো কখনো কখনো অবিজ্ঞানকেও আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। মহামারীর কাছে সহজে হারতে শিখেছে সবই ঘটেছে এবছরে যা শুধুই ব্যাতিক্রম। বারবার অস্বস্তি বারবার হারানোর হাহাকার তবু এতোকিছুর পড়েও ব্রিটেনের মানুষগুলো আসা রেখেছে আগামীর, আশা রেখেছে আরেকটা নতুন ক্রিস্টমাস উৎযাপনের, বিশ্বাস একটাই অন্ধকার কেটে গেলেই আবার আলোর দেখা মেলে।
সুমনা আদক —-