সেই আদিবাসী জনজাতি গুণধর মুর্মুর বাপ হলধর মুর্মুর কথা মনে আছে! বাপকা ব্যাটা তেরি করেছিল বটে। সেই বাপের কথা কে লিখবে?
গুণধর মুর্মুর বাপ
তমাল সাহা
গুণধর মুর্মুর বাপের নাম ছিল
হলধর মুর্মু
তিনি বাপের মতো বাপ ছিলেন
পিতার মতো পিতা ছিলেন
আসলে তিনি ছিলেন প্রতিপালক।
তিনি পাঠশালার মাস্টার ছিলেন
পঞ্চানন টুডুর বড় মেয়ে ফুলমণির সঙ্গে প্রেম করে
তার বিয়ে হয়েছিল।
তাদের একটা ছেলে হয়েছিল—
তার নাম ছিল গুণধর মুর্মু।
হলধর মুর্মু আসলে হলধর-ই ছিলেন
তিনি হাল চাষ করতেন
কিন্তু পড়াশুনা শিখে মাস্টার হয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি তার একমাত্র পুত্র গুণধর মুর্মুকে
আকাশ নদী অরণ্য পাহাড়ের গল্প বলতেন।
বলতেন, আকাশ মানে বিশালত্ব
নদী মানে বেগ
অরণ্য মানে একসঙ্গে থাকা
পাহাড় মানে মাথা উঁচু করে বাঁচা
আর সূর্য হল অগ্নিবলয়।
রে গুণু!
তোকে নিজেকে সবসময় শিখতে হবে–
তোকে আকাশের মতো বিশাল
নদীর মতো বেগবান
পাহাড়ের মতো উঁচু
অরণ্যের মতো মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে হবে আর
সূর্যটাকে বুকের ভেতর পুরে রাখতে হবে।
গুণধর মুর্মুর বাবা
ইন্সপেক্টরবাবুর মুখের ওপর সোজাসাপটা বলে দিয়েছিলেন
পৃথিবী ঘোরে না, পৃথিবী স্থির।
ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন,
ভুল বুঝাচ্ছেন মাস্টার মশাই।
গুণধরের বাবা পাল্টা বলেন, যা বোঝাচ্ছি ঠিকই বোঝাচ্ছি।
মাথার উপর যে সূর্যটা আছে ওই যে আগুনের বিশাল গোলাটা, সেটাই ঘুরতে থাকে।
পেটে খিদে থাকলে পৃথিবী ঘোরানো যায় না, স্যার!
মাথা সূর্যের মতো গরম হয়ে বন বন করে ঘোরে।
স্কুলের শেষে বাড়ি গিয়ে এক কুনকে চালভাজা আর দু টুকরো শশায় পেট ভরালে পৃথিবী কোনদিনই ঘোরানো যাবে না, বাবু মশাই।
পঞ্চাশ টাকা মাইনে বাড়িয়ে দিন
পৃথিবী ঠিক ঘুরে যাবে।
গুণধর মুর্মু বাপকা ব্যাটা হয়েছিল।
শোষণমুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিল
টাঙির এক কোপে জোতদার খতম করেছিল আর এই জোতদার তার মাসিকে ধর্ষণ করেছিল।
গুণধর মুর্মু পেরেছিল
কারণ তার বাপ ছিল হিম্মতদার।
হিম্মতদারের ব্যাটা হিম্মতদার!
বাপ ত্যু কুথা গেলি! কুথা গেলি?
আজও দ্বারকেশ্বর নদী পারে
অরণ্যের ভেতর থেকে ভেসে আসে গুণধর মুর্মুর চিৎকার!
ইখন তো বাপ, তুর মতো বাপ জরুরি দরকার।