অবতক খবর,২৭ মার্চ:দেবব্রত মন্ডল,বাঁকুড়া:- চাকরী মেলেনি, জীবন যুদ্ধে হার না মানা লড়াইয়ে ভূগোলে স্নাতকোত্তর বিএড গৃহবধূ নিজের জীবনের ভূগোল বদলে বেছে নিয়েছেন ট্রেনে হকারির পেশা ।
ভূগোলে স্নাতকোত্তর সঙ্গে বি এড। সুযোগ পেলে তিনি অনায়াসেই কোনো স্কুলে আজ শিক্ষিকা হতে পারতেন। অন্য কোনো চাকরী পাওয়াটাও খুব একটা কঠিন ছিলনা মেধাবী বৃষ্টির কাছে। কিন্তু চাকরীর মার্গিগন্ডার এই বাজারে সুযোগ আর জুটল কই? অগত্যা সংসারের হাল ধরতে বৃষ্টি এখন লোকাল ট্রেনের পরিচিত এক হকার।
বাঁকুড়ার ছোট্ট রেল স্টেশন পিয়ারডোবা। এই স্টেশনেই শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা প্রতিদিন সাত সকালে বৃষ্টি আসেন। বৃষ্টি আসেন দু কাঁধে ভারী দুখানা ব্যাগ নিয়ে। দিনভর এ ট্রেন সে ট্রেনে দৌড় ঝাঁপ। লোকাল ট্রেনের মূলত মহিলা কামরায় ওঠানামা করে চলে ব্যবসা । দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে ফের স্টেশন ছেড়ে ব্যাগ দুখানা কাঁধে ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া।
বাঁকুড়ার সাবড়াকোন গ্রামের গৃহবধূ বৃষ্টি পালের এটাই এখন রোজনামচা। না! জীবনের ভূগোলে এমন পরিনতি হওয়ার কথা ছিল না বৃষ্টির। অভাবের সংসারে ছোট থেকেই মেধাবী বৃষ্টির লক্ষ ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। সেই লক্ষে অবিচল বৃষ্টি নিজের পরিবারের নিদারুণ অভাব আর অনটনের সাথে নিত্য লড়াই করে ভূগোলে স্নাতকোত্তর পাস করেন। সেরে ফেলেন বি এড প্রশিক্ষণও। কিন্তু শিক্ষিকা হওয়ার প্রবেশপথই যে বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে এরাজ্যে বন্ধ শিক্ষক নিয়োগের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা। এদিকে বেসরকারী সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামী কাজ হারিয়েছেন।
একমাত্র মেয়ে, শাশুড়ি আর প্রায় কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টির সংসার যে আর চলেনা। অগত্যা নিজের জেদ আর সাহসকে সম্বল করে হকারি শুরু করেন বৃষ্টি। মূলত মহিলাদের পোষাক বৃষ্টির পণ্য। সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম ও মেয়ের পড়ার পাঠ চুকিয়ে বৃষ্টি নিত্যদিন দুটি ব্যাগ ভর্তি পন্য নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সাবড়াকোন থেকে বাসে করে পিয়ারডোবা স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেনে ট্রেনে চলে হকারি।
দিনশেষে আবার একই ভাবে ফিরে যান নিজের বাড়িতে। শিক্ষিকা হয়ে ওঠার স্বপ্ন ভাংলেও জীবন যুদ্ধে হার না মানা মেয়েটা নিজের কাজের ফাঁকে গর্ব করে বলতে পারে কোনো কাজই ছোট নয়। বৃষ্টির এই লড়াইকে কুর্নিশ তাঁর পরিবারের। নিত্যদিনের বৃষ্টির লড়াইকে কুর্নিশ জানান ট্রেনের যাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও। কুর্নিশ আমাদেরও।