দিল্লিতে সি এ এ প্রত্যাহারের আন্দোলন এখন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে । দিল্লি হিংসার আজ পঞ্চম দিন। এই হিংসায় চারদিনে ইতিমধ্যে 24 জনের মৃত্যু হয়েছে, গুরুতর আহত হয়েছেন 250 জনেরও বেশি। এমন অবস্থায় দিল্লির নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাত থেকে সরিয়ে সিআরপিএফ-প্যারামিলিটারির হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর এসবের জন্য দায়ী কে সে খুঁজতে গিয়ে একটি মামলা করা হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। আর সেই দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিরা এক রায়ে জানিয়ে দিলেন, এই ঘটনার পেছনে যারা উস্কানি দিয়েছে তাদের দায়ী। তাই চার বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে নির্দেশ দিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিরা।
শুধু চারজনই নয় আরো যারা যারা উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন দিল্লিতে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে বলেছেন বিচারপতিরা।
আজ দিল্লির হিংসা পঞ্চম দিনে পা দিয়েছে এই হিংসার জন্য দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন আমলা হর্ষ মান্দার। মান্দার দাবি করেছিলেন যে হিংসার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক। শুধু তাই নয় উপদ্রুত এলাকায় মোতায়েন করা হোক সেনাবাহিনী ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
হর্ষ মান্দারের আবেদন শুনতে দুই বিচারকের একটি বেঞ্চ তৈরি করা হয় বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি তালবন্ত সিংকে নিয়ে। এই দুই বিচারপতির বেঞ্চ মান্দারের করা মামলার শুনানি করতে গিয়ে আদালত এই বিজেপি নেতাদের বক্তব্য পেশ করতে বলেন। বক্তব্য শুনে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে দিল্লির হিংসার জন্য যে অবস্থা তৈরি হচ্ছে, যেভাবে আগুন জ্বলছে তার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য তার পেছনে অবশ্যই একটা কারণ হিসেবে রয়েছে। তাই তিনি মামলার শুনানির পরে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সি এ এ বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ শাহীনবাগে আন্দোলনকারীদেরকে সামনে রেখে পরিষ্কার বলেছিলেন “দেশকে গাদ্দারো কো গুলি মারো….. কো।” তার এই শ্লোগান ও বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে তিনি মানুষকে উস্কানি দিয়েছেন। আর তার বক্তব্যর পরেই একের পর এক শাহীনবাগের আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চলেছে।
একইভাবে বিধায়ক অভয় ভার্মা শাহীনবাগের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কারীদের কে হত্যাকারী ও ধর্ষক বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।তিনিও একই ভাবে আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে গুলি করার কথা বলেছিলেন। অভয় বারমা দিল্লি বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন।
দিল্লির পূর্ব বিধায়ক ও আরেক দাপুটে বিজেপি নেতা কাপিল মিশ্রা তিনি ডিসিপির উপস্থিতিতেই সরাসরি আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যদি রাস্তা খালি করা না হয় তাহলে তিনি আর তাদের ছেড়ে কথা বলবেন না।
তিনি পরিষ্কার বলেছিলেন ট্রাম্পের যাওয়া অবধি তারা শান্তিতে চলে যাচ্ছেন কিন্তু তার যাওয়ার পর আর আপনাদের কোন কথা শুনব না, যদি রাস্তা খালি না হয়। ট্রাম্পের চলে যাওয়ার পর জাফরাবাদ ও চাঁদবাগে সমস্ত বিক্ষোভের রাস্তা খালি না করা হয়,তবে এরপর আমরা রাস্তায় নামবো …. এই কপিল মিশ্রর বক্তব্য ট্রাম্পের যাওয়ার পর হুবহু মিলে গেল। তারা রাস্তায় নামলেন আর ইতিমধ্যে 24 জন মারা গেছেন।
দিল্লির সাসংদের বক্তব্য কিছু কম যায়নি। প্রবেশ ভার্মা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে অর্থাৎ 11 তারিখে সরকার তৈরি হলে এক ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত শাহীনবাগ আন্দোলনকারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না, শুধু তাই নয় তিনি বলেছিলেন তাদের সরকার এক মাসের মধ্যে যে সকল মসজিদ তৈরি হয়েছে এলাকায় সরকারি জমিতে একটাও কিন্তু থাকবে না।
তাদের এ ধরনের পরিষ্কার বক্তব্য শুনে আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয় সলিসিটর জেনারেলকে পুলিশ কমিশনারকে যথাশীঘ্র এদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে উপদেশ দেন। এরা দাঙ্গার জন্য পর্যাপ্ত উস্কানি দিয়েছে বলে তথ্য তাদের বক্তব্য থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।
CAA বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের যেভাবে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে বা তাদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রকাশ্যে বিজেপি নেতারা হুমকি দিয়েছেন তা কিন্তু আদালত গ্রহণ করেছে। আর তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার দাঙ্গা ছড়িয়েছে বলে আদালত মনে করছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পরিষ্কর আদালত বলেছে। কিন্তু প্রশ্ন দিল্লির লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্য যোগী বিরুদ্ধেও কি মামলা শুরু করবে? তার বিরুদ্ধেও কি এফআইআর হবে? কারণ তিনি পরিষ্কার বক্তব্য দিয়ে বলেছিলেন যদি CAA বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তারা যদি “বুলিতে না শোনে তাহলে গুলিতে তো শুনবে”। তার এই বক্তব্যের পর একের পর এক গুলি করে খুন করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের।
আজ বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাদের গতকালের নির্দেশের পর পুলিশের বক্তব্য শুনবেন। কত জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে এফআইআর হল সেসব তথ্য দেখবেন। আর কারা কারা এ মামলায় তে পড়বে? পুলিশ কে খতিয়ে দেখতে বলেছেন। পুলিশের বক্তব্য শুনে আজ মামলার শুনানি করবেন। দিল্লির হিংসা ও আন্দোলন নিয়ে কি নতুন নিৰ্দেশ দেন সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে সারাদেশ।