অবতক খবর,৬ সেপ্টেম্বর,রুপম রায়,নদীয়া: ট্রেনে পুরুষের পাশে বসায় মহিলাকে তালিবানি ফতোয়া।একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সালিশি। এক মহিলাকে সপরিবারে একঘরে করে দিল গ্রামের সালিশি সভার প্রধানেরা।
চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী থাকল নদীয়ার ভীমপুর থানার নেলুয়ার গ্রামবাসীরা। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, ঐ গ্রামের এক ব্যাক্তির সাথে ট্রেনে পাশাপাশি বসতে দেখা গিয়েছিল এই গ্রামের আটপড়ে গৃহবধূকে।
এই ছবি গ্রামের কোন এক যুবক ফেসবুকে পোস্ট করে দেয়। এরা দু’জনে পালিয়ে যাচ্ছেন। এই গুজবে গ্রামবাসীরা রিতিমত ঢ্যাঁরা পিটিয়ে গ্রামে তা প্রচার করে। ওই মহিলা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ কথা বললে অথবা কারো জমির ওপর দিয়ে হাঁটতে দিলে বা কোন দোকানদার জিনিসপত্র বিক্রি করলে পাচঁ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।ফলে কোন দোকানদার এই পরিবারের সদস্যদের নুন পর্যন্ত বিধি করেনি ।ফলে পাঁচটি শিশুকে নিয়ে বিপদে পড়েছে ওই পরিবার।
ঘটনার কথা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী সালের কাছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলার ছোট মেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। মাথায় টিউমার হয়েছে।মাসে দুই বার চিকিৎসা করাতে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হয়। ওইদিন ঘটনাচক্রে তার পাশে এসে বসেন গ্রামের এক ব্যাক্তি।এই ছবি তুলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
গ্রামের বেশকিছু মহিলা এই ঘটনা সত্য বলে একজন অসহায় মহিলাকে চরিত্রহীন বলে ভৎসনা করেছে। যদিও মহিলার পরিবারের সকলে অবশ্য তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
গ্রামবাসীরা প্রায় ২০০ জন সালিশি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন গ্রামের ২৪ জন মাতব্বর।
সেখানকার সভাপতি ইদ্রিশ বিশ্বাস বলেন,ওদের বাড়ির লোকেদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের এতবড় সাহস ওরা আসেনি। গ্রামের সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখায়।
সূত্র মারফত জানা যায়,বছর পনেরো আগে গোলমাল বাধায় সালিশি সভা বন্ধ হয়ে যায়। এত বছর পর আবার চালু হওয়ায় তালিবান শাসনের মতো দেখছে অনেকেই।
সমাজের বিশিষ্ট সমাজসেবী জানিয়েছেন, এই ভাবে কি সালিশি সভা করা যায়?
যদি কারো পাশে বসা অপরাধ হয় তাহলে যে পুরুষ বসেছিল সেও তো সমান দোষে দোষি। তবে তাকে কেন ছার? উত্তর অজানা।
তাইতো ভাবাচ্ছে, এটা কি তালিবানি শাসন?