দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কদাকার মানুষের পায়ের কাছে
তমাল সাহা
তোমার চেহারা এতো বদখৎ ছিল কেন কে জানে! কদর্য বললে ভুল হয়, কুৎসিত বলাই ভালো।
হৃদয়ের ভিতরে অন্তর্লীন ছিল জোরালো আলো।
দেহের উপরে চাপানো একই রকম প্রতিদিনের নোংরা পোশাক। নাক তো চ্যাপ্টা। চোখ দুটো ছিল ভীষণ কোটরগত।
এমনও অবয়ব হয় মানুষের? পায়ে সেই মলিন জীর্ণ চটি জোড়া।
তোমাকে দেখি আর ভাবি অবিরত।
পৃথিবীটা এখনো আবর্জনাময়। রাষ্ট্রীয় অমানবিক কান্ডগুলি, ধর্মীয় দাপটের অসভ্যতা– বর্তমান কালের আকৃতি।
এসবই বোধহয় তোমার অঙ্গ-বিভঙ্গের প্রতীকী।
এমন বোধই তো প্রতীয়মান, এমনই আমার অনুমান।
সকালে বেরিয়েই বাজারে ঘোরো, তুমি এত সরল বাজারি মানুষ
মানুষের দিকে ছুঁড়ে দাও একের পর এক প্রশ্নবাণ।
আমি তো আর তোমার মুখ দেখিনি, উক্তিতে বলে গেছ তুমি, আমি যে জানিনা কিছুই এই উপলব্ধই মানুষের প্রকৃত জ্ঞান।
তুমি কত কী বলো! তোমার অনুপ্রাণিত কত নামজাদা শিষ্য
একের পর এক নাম ইতিহাসে লেখা দেখেছে সমগ্র বিশ্ব।
দাম্পত্য যাপিত জীবনে প্রতিনিয়ত কলহ, তুমিও তার মুখোমুখি।
প্রেমিকা তোমার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
বালতি থেকে ছুঁড়ে দেয় জল মাথায়।
তুমি নিরীহ মানুষ অপেক্ষা করছিলে তখন দরজায়।
সে সময়ে তোমার সেই বিখ্যাত উক্তি সামাজিক জীবনে আশ্চর্য এক সৃষ্টি।
কি বলেছিলে তখন তুমি, আহা, বজ্রপাতের পরে যেন মনোরম বৃষ্টি।
সাহিত্য সঙ্গীত কাব্যে অনুরাগ তোমাকেই মানায়।
কি বলেছিলে তুমি–যাই হোক বিয়ে করো, তোমার স্ত্রী ভালো হলে তুমি হবে সুখী, আর স্ত্রী খারাপ হলে? তুমি হবে দার্শনিক।
মৃত্যুর সঙ্গে সওয়াল জবাব প্রকাশ্য এরিনায়–তুমি এক মহান জীবন ঐতিহাসিক।
তুমি বলো, সৎ ব্যক্তি আসলে শিশুর মতো, তার সে কী ভয়ানক ফুর্তি!
শিক্ষা হলো শিখার আগুন জ্বালানো, নয় কোন পাত্র ভর্তি।
যার টাকা আছে তার কাছে আইন আকাশের মত বিশাল।
যার টাকা নেই তার কাছে আইন বড় জটিল মাকড়সার জাল।
আরো বলো,
ঈশ্বর তোমাকে সৃষ্টি করেনি। তুমি সৃষ্টি করেছো ঈশ্বর।
ঈশ্বর কোন বিমূর্ত নয়, জ্ঞানই দেবত্ব-ঐশ্বর্য
তুমি নরশ্রেষ্ঠ, এই উপলব্ধিকে করো গ্রাহ্য।
তুমি নাকি ধর্মদ্রোহী,গণতন্ত্র বিরোধী হায়!
সব অভিযোগ যুক্তিতে করে দাও খান খান
নিজেকে জানো, আয়নায় দেখো– এটাই আসল বিজ্ঞান।
এরিনাতে প্রকাশ্য বিচার, সে তো একটি প্রহসন!
৫০১ জন জুরিরর বিচারে ২৮১ বনাম ২২১-এর লড়াইয়ে হয়েছে নাকি তোমার পরাজয়!
তুমি তো এখনো জেগে আছো, অজেয় অক্ষয়।
পড়শির কাছে সেই কবেকার ধার, একটি মুরগি ছিল তোমার ঋণ।
শেষ শ্বাস বাতাসে ভাসে–,
শিষ্যকে তুমি ডেকে বলো, হে প্রিয়! আমার দেনা শোধ করে দিও একদিন।
পড়ি আর শিখি, কী অকাট্য যুক্তি তোমার!
আপনারা আমায় শত শত মুদ্রা দিলেন আমি একটিও নিলুম না, তবে সেটা হল কার?
জুরিরা উঠলো বলে, সে তো আমাদেরই আমার।
আপনারা আমায় অভিযুক্ত করলেন। একটিও অভিযোগ আমি মানি না। তবে সেটা রইল কার? কার?
হেমলক পূর্ণ পাত্র হাতে,গরল! গরল! বিষ!
তোমার মৃত্যুদৃশ্য চোখে ভাসে অহর্নিশ।
কে সেই মানুষ?এখনো চেতনায় জাগে, সক্রেটিস সক্রেটিস!