একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। রাষ্ট্র বলছে দুর্ভাগ্যজনক।

দুর্ভাগ্যজনক
তমাল সাহা

উড়ালপুল ভেঙে পড়ে মাথায়,
পতনশীল চাঙরে বাষট্টি জন মারা যায়—
তুমি বলো ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

নদীর উপরে সেতু, মানুষ করে পারাপার।
ভেঙে পড়ে বাঁশের মাচা,
মৃতদেহ ভেসে ওঠে
চলে যায় এপার থেকে ওপার—
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

চা বাগানে শ্রমিক মরে অনাহারে।
তুমি বলো অপুষ্টি,
সরকারি আমলা ঘাড় নাড়ে,
তোমার কথায় মনোতুষ্টি—
তুমি বলো ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

সেচের জল নেই,জমি ফুটোফাটা—খরা।
অপুষ্ট ধান যায় ঝরে,
চাষির হাতে দড়ি, আত্মহত্যা করে—
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

টিনের চালা,শেডে জং,মেশিনে ঝুল।
লক্ষ লক্ষ কারখানার গেটে ঝুলানো তালা,
হায়রে শ্রমিক, হায়!
তোর হাতে ভিক্ষের থালা—
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

চাকরি নেই,প্রতিবাদী মিছিল—
পুলিশ নেমেছে ময়দানে–গুলি।
উদ্যত সঙ্গীন,উড়ে গেল খুলি
মানুষের জয়গানে—
তুমি বলো ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

পার্টি,পেশী, পুলিশ সহবাস।
মুদ্রা ও মোহরের ঝনঝন শব্দ শুনি
খাদানে পড়ে গেল
শাসকের এক গোষ্ঠীর লাশ—
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

কয়লা খাদান,পাহাড়ি নদী ঢুকে গেল জল।
তেরোজন শ্রমিক ডুবে গেল অতল।
খনির মুখে দাঁড়িয়ে
স্ত্রী,ছেলে-মেয়ে,বিধবা মা।
চোখে জল,না আগুন
কে কাকে করে ক্ষমা!
উদ্ধার হল না কোনো মৃত শ্রমিক
শাসক হাত পা ছোড়ে,বড় অমায়িক!
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

গঙ্গা সবরমতী সরজু নদীর
তীরে এতো লাশ!
হত‍্যা-কোতল হাজার হাজার লোক,
আমরা বলি, মানুষের জয় হোক!
এই নাকি জয়ের স্লোগান
শুনে শুনে ভারি হয় কান–
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

নীল সাইকেল পেয়েও পালাতে পারেনি
ধর্ষিতা মেয়েটি,পড়ে আছে রাস্তায়।
হতভাগী মা, কন্যাশ্রী! রূপশ্রী! বলে
ভেঙে পড়ে কান্নায়—
তুমি বলো, ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

ভাগ্য কি বস্তু জানিনা
সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য শব্দ দুটি
ছেলেবেলা থেকেই শুনি,
যা ঘটে সবই দুর্ভাগ্যজনক।
এখনো সৌভাগ্যজনক
কোন ঘটনা জানতে পারিনি।

রাষ্ট্রচালক এখন চালাক বড়।
শব্দ পাল্টায়,
দুর্ভাগ্যজনক শব্দটি ছেড়ে দিয়ে বলে
এতো সামান্য তুচ্ছ ঘটনা, ব্যতিক্রমী।
কবে অসামান্য, মূল্যবান ঘটনা ঘটবে
হা-করে তাকিয়ে থাকি আমি।