অবতক খবর,৮ মার্চ: নারী দিবস! নারী দিবস! কি যে কন নারী দিবস। ফুল,বেলপাতা, ঝরাফুল রজনীগন্ধার মালা, গোলাপ ফুল, গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে বসে আছি। এই সকাল এখন সাড়ে এগারোটা বাজে। কত মালা রয়ে গেছে,কটা বিক্রি হয়েছে বলুন তো! নারী দিবস! নারী দিবস খায় না মাথায় দেয়? জানিনা। ফুল বেচি। হাজার টাকা পুঁজি।
অন্যান্য মাসিরা কোথায়? জিজ্ঞাসা করলে বলেন, এই যে বড় রাস্তাটা কবিগুরু রবীন্দ্র পথ,এই যে গ্রিলের বেড়াটা অর্থাৎ এই আইল্যান্ডের পাশে বসিরোদ মাথায় করে। এখানে বসতে দিতে চায় না। তাই অন্য মাসিরা ব্যবসাপত্র প্রায় গুটিয়ে নিয়েছে। আমি জোরজবরদস্তি কোনমতে এখানে ব্যবসা করছি।
এই দেখেন ঝোলানো রয়েছে কত রজনীগন্ধার মালা,বাসি পুরানো হয়ে গেছে। লাভের কি থাকবে? এই সব পুরানো আর বাসি মালা কে কিনবে? ফেলে দিতে হবে। চার পাঁচশ টাকা হয় কোন কোন দিন দুশো টাকা হয়। হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে আমি বসি বললেন, শেফালী দেবী।
আর ফুল মাসিদের দেখতে পেলাম না। চলে এলাম লেনিন সরণিতে, পুরনো শ্রীদূর্গা সিনেমা হলের সামনে আরেকজন মাসিকে খুঁজে পেলাম। মায়া দেবী। গাংনাপুর থেকে আসেন। তার কাছেও সেই একই অবস্থার কথা শুনি।
একজন তো বলেই ফেললেন, আছে, স্বামী আছে। কিছু করেনা। পরিষ্কার বললেন, মদ খায়, সকালবেলা এসে দোকানটা পেতে দিয়ে চলে যায়। তার কোন উপার্জন নেই, তাকেই আমার চালাতে হয়। ছেলেপিলে দুজন আছে ছোট। সারাদিন খেটেখুটে এই পয়সা দিয়েই সংসার চালাতে হয়।
নিজের মরদ মদ খায়। সে ব্যঙ্গাত্মকভাবে এ কথা প্রকাশ্যে লোকের সামনে বলে। যখন আমরা তার এই সাক্ষাৎকার নিই, তার সঙ্গে কথা বলি, লোক জড়ো হয়ে যায় এত লোকের সামনে বলতেও তার কোনো দ্বিধা নেই।
আজ দুজন ফুল মাসিকে পেলাম,এই নারী দিবসের দিন। নারী দিবস। নারী দিবস নিয়ে কি করব?পেটের খাবার জোগাড় করবো, না নারী দিবস নিয়ে ভাববো? আরে আমাদের তো ভাবার দরকার নাই। এই তো বয়স হয়ে গেছে,লেখাপড়া শিখি নাই। কিছুই বুঝি না, খালি ফুল বেচি।
আমরা জন্মদিনে ফুল বেচি, আমরা বিয়ের ফুল বেচি, যে ছেলেটা গুলি খেয়ে মরে আমরা তার জন্য ফুল বেচি। যে শ্মশান যাত্রী তার জন্য ফুল বেচি। ফুলের কোন জাত নেই, ধর্ম নেই, কিছু নেই। সব কিছুতেই ফুল লাগে,ফুল লাগে দেবতার পুজোতেও। মানুষের জন্য ফুল জোগাড় করাই আমাদের কাজ। সে জন্মই হোক, সে বিয়েই হোক। আনন্দের উৎসবে পয়সা নেওয়া যায়, যে ছেলেটি গুলি খেয়ে মরে যে মানুষটি শ্মশানে যায়, তারজন্য ফুল বেচি। অর্থাৎ দুঃখের ফুলও বেচতে আমাদের কষ্ট হয়না। আসলে এই যে পেট এই পেটের জন্য সুখ আনন্দ দুঃখ–এইসব অনুভব আর থাকেনা তখন মাথায় থাকে পয়সা,উপার্জন।