অবতক খবর,২৬ নভেম্বর: কাঁচরাপাড়ার শিক্ষা জগতে এ সময় একটি শোকাবহ কালে পরিণত হল। মঙ্গলবার এবং বুধবার দিন প্রয়াত হয়েছেন কাঁচরাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সুপরিচিত বাংলা শিক্ষক অমিয়ভূষণ সরকার এবং ভূগোল শিক্ষক দয়ালকৃষ্ণ চৌধুরী।

দয়ালকৃষ্ণ চৌধুরী শহীদ নগরে থাকতেন। অবসরকালীন জীবনে তিনি শহীদ নগর রামকৃষ্ণ সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। রামকৃষ্ণের আদর্শে তিনি তাঁর জীবনধারাকে প্রবাহিত করতেন। এটা ঠিকই যেকোনো মৃত্যুই শোকাবহ। তাঁরা দুজনেই অশীতিপর ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু তাঁদের হাত ধরে নিয়ে চলে গেছে। ‌মূলত বার্ধক্যের কারণেই তাঁরা প্রয়াত হয়েছেন।

বাংলা শিক্ষক অমিয়ভূষণ সরকার কাঁচরাপাড়ার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। কলকাতা পর্যন্ত তাঁর সাহিত্যপ্রীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৬৩ সালে ২৩ এবং ২৪ মার্চ দুদিন ব্যাপী জেলা বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাঁচরাপাড়া বেল ইনস্টিটিউটে। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সঞ্জীব কুমার বসু এবং অমিয়ভূষণ সরকার ছিলেন তাঁর সহযোগী। এই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এত বিশাল মাপের হয়েছিল যা কাঁচরাপাড়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবাই যায় না। ২৩ মার্চ এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী হরেন্দ্র নাথ চৌধুরী এবং অধিবেশন উপলক্ষে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন লেডি রাণু মুখার্জী। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কাঁচরাপাড়ায় বসে গিয়েছিল চাঁদের হাট। কে না হাজির ছিলেন এই অনুষ্ঠানে!

এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন বসু, রম্যাণি বীক্ষ্য খ্যাত এবং রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত কাঁচরাপাড়া অফিসার্স কলোনিতে বাসরত সুবোধ চক্রবর্তী ও ফণীন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত ছিলেন ভাষাবিদ ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তিনি বিশেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ডঃ দীনেশ চন্দ্র তাপাদার,প্রমোদ বিকাশ ভট্টাচার্য্য,হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায়।

এই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশিষ্ট অভিনেতা সুশীল সরখেলের পরিচালনায় আনন্দমঠ নাটক। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য নাট্যশিল্পী অহীন্দ্র চৌধুরী।

শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ইস্কুল ছুটি দেওয়া হয় এবং স্কুল শিক্ষকমন্ডলী প্রয়াত শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানান।

পরিচালক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অলোকময় লাহিড়ীজানান, তিনি এই কাঁচরাপাড়া হাই স্কুলে পড়তেন। এই দুই শিক্ষকের ছাত্র ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে তিনি এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন অর্থাৎ এই দুই প্শিক্ষকের সহকর্মীতে পরিণত হন। তিনি বলেন, সেই সময়ে অর্থাৎ শিক্ষার পরিবেশ ছিল অন্যরকম। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষকদের যে সম্পর্ক অর্থাৎ এই দুই শিক্ষকের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সেটি সংস্পর্শের সান্নিধ্যের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক হয়ে ওঠে।

স্কুলের পক্ষে টিচার ইনচার্জ গৌতম পাল জানান, এই দুই শিক্ষক পরিবারের কাছে শোক প্রস্তাব এবং সমবেদনা পত্র পত্র পাঠানো হয়েছে। এই দুই শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই স্কুলের উত্তরণে। তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আজ তাঁদের জীবনের এই মহাপ্রস্থানের পথে তাঁদের যাত্রা শুভ হোক, এই আমাদের প্রার্থনা।