আমার ভারতবর্ষ!১৬০ কিমি দূরত্ব হেঁটে চলে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মধ্যপ্রদেশের সাতনা পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা পরিযায়ী সাহসিনী মা আমার।পথে জন্ম দেয় নবজাতকের।তার দুঘন্টা পর শিশুকোলে আবার হেঁটে চলে…
পরিযায়িনীর প্রসব
তমাল সাহা
দিন চলে যায় রাত্রি ঝিমিয়ে পড়ে।
আমার সব গল্পের শেষ,
নারীরা পড়ে থাকে অবশেষ।
যে নারীটি দ্রুতপায়ে হাঁটছিল
তার পরিক্রমা ধীর হতে থাকে।
সে কি রমণী!
তার দিকে চেয়ে থাকি,
সে তো পরিযায়ী মজুরানি।
ক্রমাগত পথ হাঁটা তার।
আরো আরো পথ সে হাঁটবে
কতদিন কতবার সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখবে!
কখন ফিরবে বাস্তুভিটেতে
চোখ স্থির হয়ে আছে ঘরের খুঁটিতে।
নারীটির দৃষ্টি এখন আশ্চর্য!
স্থবির নারীটি দাঁড়িয়ে পড়ে,
দেখে মনে হয় যেন অনুপম ভাস্কর্য।
ডোরা শাড়িতে পেটটি হয়ে আছে উঁচু।
গর্ভের সম্পদ তার ভার হয়ে ওঠে,
ক্লান্তিতে মাথা ঝুঁকে নিচু।
কিছুক্ষণ নারীটি জিরোয়—
রাস্তার উপর বসে পড়ে পা দুটি ছড়িয়ে।
পেটে হাত বুলায়, অশান্ত কি পড়ল ঘুমিয়ে?
বাইরে সংকট,
ভিতরে নড়েচড়ে অনাগত বিপদ।
পেট আঁকড়ে ধরে নারীটি।
তুই তো আমার আগামী সম্পদ।
নারীটি আবার হাঁটতেই থাকে।
প্রসব যন্ত্রণা ওঠে পথের উপর।
অন্ধকার গর্ভ ভেদ করে বেরিয়ে আসে নবজাত সন্তান।
লকডাউন তো নীচে,
উপরে উন্মুক্ত আকাশে পাখিরা
ডানা মেলে গেয়ে যায় গান।
এখন একজন নয়,দুজন একসাথে হাঁটে।
সাহসিনী নারীটি মা হয়ে হাঁটে,
কোলে নিয়ে নতুন পথিক।
মা আশায় থাকে,
আর কত পথ কতদিন হাঁটলে
দিনটি হবে ঐতিহাসিক।
মা শিশুর দিকে তাকিয়ে বলে,
বাছা! কবে হবি তুই পদাতিক?