অবতক খবর,রাজীব মুখার্জী, হাওড়া :- আর হাতে গোনা কয়েকটি দিন, তার পর দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে বাঙালির । বাংলা বলতেই মনে আসে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। রবীন্দ্রনাথের সেই গান আজও বাংলার গর্ব। কিন্তু বাঙালিরা এই বাংলাকে প্রায় ভুলতে বসেছে। ভুলতে বসেছে বাংলার অতুলনীয় হস্ত শিল্প কেও।
তাই সেই বাংলা ও বাঙালির কৃষ্টিকেই আবার বাঙালীর মনে জায়গা করে দিতে আসছে সাঁত্রাগাছি কল্পতরু সংঘ। সেখানকার পুজোর থিমের মধ্যে দিয়েই উঠে আসবে সেই গ্রাম বাংলা ও বাঙালি কৃষ্টির ছবি। শরতের নীল আকাশ আর শিউলির গন্ধ যেন মায়ের আগমণ বার্তা দিচ্ছে।
মা আসছে, সেই আনন্দেই মেতে উঠেছে সকলে। পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলে থিমের কাজ এখন চলছে জোরকদমে। এই সব কিছুই মায়ের আসার আগাম বার্তা ,যা বলে দিচ্ছে হাতে আর মাত্র কটা দিন তার পরেই মা আসবে স্বপরিবারে। আর সেই মাকে সাঁত্রাগাছি কল্পতরু সংঘ এবার উপহার হিসাবে দিতে চলেছে আমাদের এই বাংলাকে। এবছর তাদের থিমে থাকছে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সচেতনতা র বার্তা। সেই জন্যই বাংলার সমাজ থেকে শুরু করে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি সব কিছুই গোটা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে তাদের এই পরিকল্পনা।
প্রতিবছরই বিবেকানন্দ মিলন সংঘে থাকে আকর্ষণীয় সব থিম। এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও এবছর সেখানে থাকছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি বিশেষ বার্তা। এবছর তাদের পুজো ৩৭ বছরে পা দিচ্ছে। ৩৭ বছর পুর্তি উপলক্ষে সেখানে এবছরও থাকছে বিশেষ চমক। এবছর সেখানে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার হস্ত শিল্প ও জামিনি রায়ের পটচিত্র কথা। কোভিড সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শিল্পের আকারে পট চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ প্রাঙ্গনে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নিত্যদিনের কাজ সম্পাদন কোথাও মাস্ক ব্যাবহারের অবশ্যিকতা এই সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে।
পাশাপাশি এই করোনা পরিস্থিতিতে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করে গেছেন তাদের সন্মান জানানোর ব্যবস্থাও করেছেন এই পুজোর উদ্যোগতদের তরফ থেকে। এই প্রসঙ্গে ওই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুজিত দত্ত জানান তারা খুব সংশয়ে ছিলেন। এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে পুজো করার অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা। রাজ্য সরকার অনুমতি দিয়েছেন এবং যে সমস্ত নির্দেশিকার কথা রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে সেই সমস্ত কিছু মেনেই তারা পুজোর আয়োজন করছেন। তিনি দাবি করেন যেহেতু এখনো করোনার প্রতিষেধক আসে নি তাই, যে যে পদক্ষেপ নিলে সেই ব্যক্তি নিজেকে কোভিডের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন সেই সামাজিক সচেতনতা র বার্তাই তারা দিচ্ছেন এ বছরে।
তিনি আরও জানান তাদের মণ্ডপে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। মণ্ডপের বাইরে মাস্কের ব্যবস্থা তারা করছেন। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থাও করা হবে মণ্ডপের ভিতরে। মণ্ডপের মূল প্রবেশদ্বারে থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্যানিটাইজেশনের পরেই দর্শনার্থীদের মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলেই তিনি দাবি করেন। এছাড়াও তিনি বলেন এই বছরে কোভিড পরিস্থিতকেই তাদের মণ্ডপে তারা ফুটিয়ে তুলেছেন। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাস্কের ব্যাবহারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। মূলত বাঁকুড়ার একটি গ্রাম কে তারা উপস্থাপিত করেছেন তাদের মণ্ডপে। এর সাথে বাঁকুড়ার বিখ্যাত পট শিল্প কে যামিনী রায়ের শিল্প ভঙ্গিমায় তুলে ধরছেন তারা। আর ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, মিডিয়া সহ কোভিড যোদ্ধাদের কে তারা রেড স্যালুট জানাচ্ছেন তাদের মণ্ডপে বলেই দাবি করেন তিনি।