বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর ::- দিল্লি রাজ্য নির্বাচনে দিল্লিবাসীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপদেশ মেনে ভোট দান করেন ও তারা আপকে ক্ষমতায় এনে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী এই ভোটে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন যে দেশকে বাঁচাতে,দিল্লিকে বাঁচাতে সন্ত্রাসবাদী দলকে ভোট দেবেন না। তাকে প্রত্যাখান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। দিল্লী বাসীরা বুঝতে পেরেছেন এবং মনে করেন যে বিজেপি দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী দল। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিজেপিকে ভোট দেননি, তারা আপকে ক্ষমতায় এনে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে আবার বসাতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণনা ট্রেন্ডে ছবি আরো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে তৃতীয়বারের জন্য দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর দল আপ। দিল্লীবাসীরা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে দেশকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে জুমলাবাজি নয় বরং উন্নয়নকে তারা বেছে নিয়েছেন। আর দেশে ধর্মীয় মেরুকরণ রাজনীতি যে সমর্থন পাচ্ছে না, তা এ নির্বাচনের ফলাফল থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
দিল্লির নির্বাচনে জল,বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নকে হাতিয়ার করে এবারও দেশের সবচেয়ে বড় দলকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে দিয়েছে যে ভবিষ্যতে বিজেপির জয় ঊর্ধ্বমুখী নয় বরং নিম্নমুখী হতে চলেছে।
উল্লেখ্য যে বিজেপি দলের পক্ষে প্রচারে 200 বেশি সাংসদ 15 জন মুখ্যমন্ত্রী ও 37 জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নামিয়েছিল। তার দল বিজেপিকে জেতানোর জন্য অমিত শাহ প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেইন করেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক সভা করে দিল্লিবাসীদের নতুন নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কিন্তু দিল্লিবাসিরা তাদের সমস্ত আবেদন নিবেদন সবই খারিজ করে দিয়েছেন। আম আদমি পার্টিকে তারা বেছে নিয়েছেন।
দিল্লির বিজেপি মুখ ও ভোজপুরী নায়ক মনোজ তেওয়ারি গতকালই দাবি করেছিলেন যে সমস্ত মিডিয়ার এক্সিট পোলকে কাত করে তারা 48টি সিট পাচ্ছেন। তার এই দাবি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়, তা আজ ভোট গণনার ট্রেন্ড দেখে বোঝা যাচ্ছে। আজকে ফের সাংবাদিকরা মনোজকে ঘিরে ধরেন। তিনি মাথানিচু ভেঙে পড়া সুরে জানান এখনও তিনি আশাবাদী।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আত্মবিশ্বাস নিয়ে গতকাল দাবি করেছিলেন যে ভোট গণনা পর্যন্ত সকলকে অপেক্ষা করতে হবে। সব স্বপ্ন ভেঙে যাবে আপের। কিন্তু তার এই দাবি ও ভিত্তিহীন সেটাও আজ ফলাফলে পরিষ্কার।
অন্যদিকে আপের এই জয়ের জন্য বিজেপি নেতা কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। কারণ যদি কংগ্রেস দিল্লিতে লড়াই করতো ও ভোট ক্যাম্পেইন করতো তাহলে দিল্লিতে বিজেপির জেতা আরো সোজা হয়ে যেত, সরল হয়ে যেত কিন্তু কংগ্রেস তা না করে চুপিসারে আপকে সমর্থন করেছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতাদের।
তথ্য অনুযায়ী কংগ্রেস প্রার্থী মাত্র 7 টিতে লড়াই করার মতো প্রার্থী দিয়েছিল। তাও সে ভাবে প্রচার চালায় নি তারা। বকলমে তারা বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস একপ্রকার ত্যাগ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দেশকে বিজেপি মুক্ত করতে আজ রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর দল স্থানীয় দলগুলোকে সমর্থন দিতে কোন দ্বিধা সংকোচ রাখছেন না, এটাও দিল্লি থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
দিল্লি ভোট নিয়ে বিভিন্ন টিভি মিডিয়া একতরফাভাবে তাদের এক্সিট পোলে দাবি করেছে যে এবার দিল্লিতে আপ ক্ষমতায় আসতে চলেছে। মিডিয়ার এই রিপোর্ট অনুযায়ী ফলাফল হচ্ছে এটাও গণনার ট্রেন্ড দেখে একেবারে পরিষ্কার ।
উল্লেখ্য যে গত বছর লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির মানুষ সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে সাতটিতেই বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করেছিলেন কিন্তু এখনো এক বছর কাটেনি। এই এক বছরের মাথায় এই দিল্লিভোটাররাই রাজ্য ভোটে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। বিজেপি আগের ইস্যুগুলোতে এবারও নির্বাচনে গিয়েছিলো। হিন্দু-মুসলমান, রাষ্ট্রীয়তা, সি এ এ, শাহীন বাগ ও ধর্মীয় মেরুকরণ তবে এই সমস্ত ইস্যু এবারকার নির্বাচনে জায়গা করতে পারেনি সেটাও পরিষ্কার।
শুধু তাই নয় এক বছরের মধ্যে বিজেপির অবস্থা নিম্নমুখী। তারা একের পর এক রাজ্য ক্ষমতা হারাছে। লোকসভা নির্বাচনের বেশিদিন হয়নি, তারা যেভাবে দেশে জয় পেয়েছিল সেই অনুযায়ী তাদের শক্তি আরো বেড়ে চলা উচিত কিন্তু তা না হয়ে উল্টোটাই হয়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানের মধ্যেই রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা হারাচ্ছে।
কিছুদিন আগেই রাজস্থান মধ্যপ্রদেশ ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। এই তিনটি রাজ্য তাদের হাতছাড়া হয়েছিল কিন্তু দেখতে দেখতে মহারাষ্ট্র কিন্তু তাদের আর দখলে থেকে যায়নি। এরপর কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনেও বিজেপি গোহারি হেরেছে। আর এখন দিল্লি যাকে মিনি ইন্ডিয়া বলে গণ্য করা হয় সেখানেও মানুষ দিল্লির ভোটে বিজেপিকে নাকচ করে দিয়েছেন।
বর্তমানে গণনা অনুযায়ী 63টি তে আপ ও মাত্র 7টি সিটে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। এক আপ নেতার দাবি গণনার এই ট্রেন্ড থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী আহ্বান মেনেই দিল্লীর জনতা ভোট দান করেছে অর্থাৎ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দিল্লিবাসীদের আহ্বান করে বলেছিলেন কোন সন্ত্রাসবাদী দলকে এবার ভোট দেবেন না।তাই প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানে দিল্লীর মানুষ সাড়া দিয়ে বিজেপিকে ভোট দেয়নি। আর এর থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে দিল্লিবাসীরা বিজেপিকেই দেশের সন্ত্রাসবাদী দল বলে মনে করেন ।