বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর,২৬ এপ্রিল :: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোশ খুলে দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের করোনা নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে পরিষ্কার করে বলেন যে, করোনা্য জন্য অক্সিজেন ও ঔষধ নিয়ে কেন্দ্র সরকার দু’রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন।পরে আপ নেতারা জানান যে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা করেন না,তা আরোও একবার আবার প্রমাণিত হলো।
শনিবার ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দেশের ১১টি করোনা প্রভাবিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক।দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের ভিডিও লিংক কেজরিওয়াল নাকি একটি নিউজ এজেন্সি কে পাঠান। সেই ভিডিও পরে বাকি নিউজ চ্যানেল লাইভ দেখাতে শুরু করে দেয়। এই বৈঠকের ভিডিওতে দেখা যায় যে,কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় প্রথমে পঞ্চমুখ। তা শুনেই দেশের গদি মিডিয়া ও বাকিরাও সকলে এই বৈঠকের ভিডিও লাইভ দেখাতে শুরু করে দেয়।
এই লাইভ সম্প্রচারে মোদি সাহেবকে কেজরিওয়াল বলেন যে, দেশের মানুষের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন প্রায় ৭০০ টন। কিন্তু এতদিন রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০০ টন অক্সিজেন। প্রধানমন্ত্রী করোনার জন্য মানুষের প্রয়োজনীয়তা দেখে দিল্লির জন্য সেই কোটা বাড়িয়ে ৪৮০ টন করার ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
তারপরেই প্রধানমন্ত্রীকে কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন যে,কোটা বাড়লেও দিল্লি বরাদ্দ ৩৫০ টনের বেশি অক্সিজেন পাচ্ছে না। তার কারণ দিল্লির আশেপাশের বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলি দিল্লি গামী অক্সিজেনের গাড়ি গুলিকে আটকে দিচ্ছে। কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, দয়া করে দিল্লিবাসীর স্বার্থে এই আটকে পড়া অক্সিজেন যাতে দিল্লি এসে পৌঁছায় তার একটি সুব্যবস্থা করুন।তিনি বলেন যে, এমন একজনের ফোন নাম্বার বা মানুষকে প্রধানমন্ত্রী বলুন যার সঙ্গে কথা বলে এই আটকে পড়া অক্সিজেন দিল্লিতে আনার ব্যবস্থা করা যায়।
কেজরিওয়াল জানতে চান যে,প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও তারা বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছেন না, তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেন এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, আধিকারিক বা মন্ত্রীর নাম বা নাম্বার দেন যাতে মানুষকে বাঁচানোর জন্য অক্সিজেন পাওয়া যায়।
বিভিন্ন মিডিয়াতে লাইভ চলতে থাকা এই বৈঠকের ভিডিওতে কেজরিওয়াল একের পর এক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর মুখোশ একের পর এক দেশবাসীর সামনে খুলে দেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী দেশের মানুষের সঙ্গে দুমুখো ব্যবহার করছেন সেটাও তুলে ধরেন তার এই বিশেষ বৈঠকে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বলেন যে, সারাদেশে এক নিয়মের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য যে কোম্পানিগুলি করোনার ভ্যাকসিন মূল্য ঠিক করেছে তা আলাদা আলাদা কেন? কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে, ভ্যাকসিন কেন্দ্র সরকার সেই একই কোম্পানি থেকে কিনছে ১৫০ টাকায়। কিন্তু এই একই ভ্যাকসিন রাজ্যগুলিকে কিনতে হবে ৪৫০ টাকায়, কেন? কেজরিওয়াল জানতে চান, কেন একই দেশে কি ঔষধের দাম একই থাকে, ভ্যাকসিনের দাম দু’রকম কেন? কেজরিওয়াল জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে এক কোম্পানিকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করার, লুট করার, আলাদা আলাদা দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করার ছাড়পত্র দিল কেন্দ্র সরকার কি করে? কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে এই সিদ্ধান্ত বদল করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখে বলেন, একই ভ্যাকসিন,একই ব্যবস্থা, একই দরে যেন সকলে পায় তার ব্যবস্থা করুন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের এই বিশেষ বৈঠকের ভিডিও সারা দেশের মানুষ বিভিন্ন মিডিয়ার মারফত লাইভ দেখতে পান। প্রধানমন্ত্রীকে এই খবরটি জানানো হয় পরে। কিন্তু যতক্ষণ এই বৈঠকের ভিডিও মিডিয়ায় দেখানো হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী জানতে পারেন ততক্ষণে সারা দেশের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর মুখোশ খুলে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
প্রধানমন্ত্রী এই খবর জানতে পেরেই সেই বৈঠকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে থামিয়ে এই লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, কেজরিওয়াল এই বৈঠকের সম্প্রচারের লিংক বাইরে পাঠিয়ে অনেক ভুল কাজ করেছেন। কেজরিওয়াল এই বৈঠকের ভিডিও LIVE করে প্রটোকল ভেঙেছেন। বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে এতে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই আপত্তির পর কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি কেজরিওয়াল এক দেশ, এক আইন, এক ভ্যাকসিন, এক মূল্য দাবি করে কি ভুল করেছেন? প্রশ্ন এটা ওঠে যে, যে ঔষধ মোদি সরকারকে ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, সেই একই ঔষধ রাজ্য সরকারকে ৪৫০ টাকায় কিনতে হবে, এটা কোন আইন? এখন প্রশ্ন এটা ওঠে যে, প্রধানমন্ত্রী একদেশে আলাদা আলাদা এভাবে ঔষধের ব্ল্যাক মার্কেটিং যে কোম্পানি করছে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন? নাকি এই ভ্যাকসিনের আলাদা রেটের জন্য সেই মোদীজির হাত রয়েছে? পেছন থেকে সেই প্রশ্ন কিন্তু ছুড়ে দিচ্ছেন মানুষ।
প্রশ্ন,এখানে মোদী সরকার দেশের জনগণের জন্য ওষুধ কিনছেন, তখন রাজ্য সরকার ও জনগণের জন্যই এই ভ্যাকসিন কিনছেন। তাহলে মোদী যখন ১৫০ টাকায় ওষুধ পাবেন, রাজ্যগুলিকে ৪৫০ টাকা দিতে হবে কেন? এই পদক্ষেপের জন্য উঠছে প্রশ্ন। তাহলে মোদী সরকার কি অতিরিক্ত ৩০০ টাকা রাজ্যের উপরে চাপিয়ে আলাদা কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে নাকি এটাও কাট মানি খাওয়ার ব্যবস্থা নাকি PM কেয়ার ফান্ডে জামা পড়বে ?? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় দেশ।