অবতক খবর, সংবাদদাতা, কাঁচড়াপাড়া :: ফের কাঁচরাপাড়া পৌরসভা চাকরির দুর্নীতির জন্য শিরোনামে চলে এসেছে । 62 জনের একটি নতুন প্যানেল টাঙনোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চর্চায় রয়েছেন পৌরপ্রধান সুদামা রায় ও তার কিছু সাগরেদরা।
কাঁচরাপাড়া পৌরসভা চাকরিতে দুর্নীতি নতুন কথা নয়। পৌরসভার চেয়ারম্যান ও তার কিছু সাগরেদদের নিয়ে খেয়াল-খুশি মতন প্যানেল তৈরি করেন এটা আগেও সামনে এসেছে । তারই কিছু বন্ধু ও কাউন্সিল এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। গতবারের মতো এবারও সেই প্যানেল নিয়ে দুর্নীতিতে মুখর হয়েছেন পৌরসভার কাউন্সিলররা তবে এবার মুখ খুলেছেন পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মাখন সিনহা নিজেই।
উল্লেখ্য গতবারের প্যানেল নিয়ে এরকমই অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু পরে সকলকে নিয়ে চাকরি কোটা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে, বিক্ষুব্ধদের শান্ত করেছিলেন চেয়ারম্যান । গতবারে যাদের হয়নি জায়গা তাদের পরের প্যানেলে পুষিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন চেয়ারম্যান সুদামা রায়। তাই এবারকার প্যানেলে অনেককে পুষিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এই তৃণমূলের চেয়ারম্যান মাঝখানে লোকসভা নির্বাচনের পর ভোল্ট মেরে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। আর সেই সময় বিজেপির নির্দেশেই তাকে প্যানেল তৈরি করতে হয়েছিল। তাই এই প্যানেলে সমস্ত বিজেপির নেতা ক্যাডারদের নাম নথিভুক্ত করে দেওয়া হয় কিন্তু আবার চাপে পড়ে তৃণমূলে ফিরে আসেন চেয়ারম্যান সুদামা রায়। প্যানেল পাল্টানোর আর সুযোগ হয়নি। অবশেষে যে প্যানেল তিনি প্রকাশ করেছেন , তাতে 62 জন প্যানেলের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গা করে নিয়েছেন এবিভিপি বিজেপি ও চেয়ারম্যানের মাতব্বরদের প্রিয়জনরা।
বর্তমানে 62 জন চাকরির যে নতুন প্যানেল এবার প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ভাইহচেয়ারম্যান মাখন সিনহা অভিযোগ করেন যে চেয়ারম্যান নিজের কিছু দালালদের নিয়ে বহিরাগতদের ও বিধায়কের লোকজনদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান যে তাঁকে কোনো গুরুত্ব দেন না চেয়ারম্যান। তিনি অভিযোগ করেন যে প্যানেল টাঙানো নিয়ে কোনো আলোচনাই করেননি সুদামা বাবু।
ইতিমধ্যে ভাইস-চেয়ারম্যান মাখন সিনহার এক অডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে তিনি পরিষ্কার এই প্যানেলে নিয়ে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার যে চাকরির নামে কাঁচরাপাড়া পৌরসভায় সাধারণ প্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করা হয়। আসলে জনগণ কে ভাওতা দিতেই ফর্ম ফিলাপ পরীক্ষা ভাইভা সব হয় কিন্তু বাস্তবে নেতা, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলররা পার্টির নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম চাকরিতে পাকাপোক্ত ভাবে জায়গা করে দেন। বেচারি সাধারণ প্রার্থীরা শুধু শুধু টাকা পয়সা ও সময় সবই চাকরির পাওয়ার আশায় বরবাদ করেন।
অভিযোগ কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চাকরির নামে মোটা টাকা পয়সায় খেলা চলেছে। চেয়ারম্যান যেতে যেতে যে শেষ দাওটিও মেরে যাচ্ছেন। কারণ তার সময়সীমা শেষ হয়ে এসেছে। 19শে মে পর্যন্ত তিনি এই পদে থাকবেন তারপরে সম্ভবত এডমিনিস্ট্রেটর এর দেখা সোনায় চলে যাবে ও এটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার পথে এগুবে।
উল্লেখ্য এই 62 জনের চাকরির প্যানেল প্রকাশ করার কথা ছিল পুজোর কিছুদিন পরে কিন্তু এই প্যানেল আটকে যায় তার বিরোধী কাউন্সিলর ও রাজা সরকারের বিক্ষোভ প্রতিবাদের পর। রাজা সরকার ঘোষণাও করেন যে এই প্যানেল ঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি ,স্বজনপোষণ করা হয়েছে, পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বিধায়কের লোকেদের চাকরি।
বিষয়টি পৌর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে পৌঁছে যায়। তখন তিনি প্যানেল আটকে রাখার কথা বলেন।বোর্ড মিটিংয়ে ও আটকে রাখার কথা স্বীকার করা হয় বলে জানা গেছে। তখন চেয়ারম্যান জানান যে নির্দেশ এসেছে তাই সে নির্দেশ মেনে কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন যারা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন, টাকা দিয়েছিলেন তারা প্রশ্ন করলে উত্তর দেবেন যারা আটকে দিয়েছেন। তিনি তখন সে কথাই বলে পাশ কাটিয়ে ছিলেন কিন্তু হঠাৎ করে এই প্যানেল আবার টাঙিয়ে দেওয়া হল। সেই প্যানেল হঠাৎ কি করে প্রকাশ করে দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। তারা কি প্যানেল প্রকাশ করার আগে ছাড়পত্র নিয়েছেন?
শুধু তাই নয় যে অডিও ইতিমধ্যে বাজারে ভাইরাল হয়েছে তার সত্যতা যদিও আমরা যাচাই করিনি সেই অনুযায়ী প্যানেল নিয়ে শুধুই দূর্নীতি ও স্বজন পোষণের কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে যে এই প্যানেল বৈধতা থাকবে তো? এই প্যানেল দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভাইস-চেয়ারম্যান মাখন সিনহা।
এখন তৃণমূল মানুষের কাছে ভাবমূর্তি ভালো করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে, মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য দৌড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে সেই সময় কাঁচরাপাড়া পৌরসভার পৌর প্রধান ও কিছু নেতার দুর্নীতি যেভাবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে তা নিয়ে কিন্তু আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি থেকেই গেল।